× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



বাঁচতে হলে মানতে হবে

গোপাল অধিকারী ওয়ার্ল্ডোমিটারের বুধবার (১৪ জুলাই) সকাল ৮টার তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ১০৩ জনের। এ সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার ১১৫ জনের। এ নিয়ে মোট করোনা শনাক্ত হলো ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩৭ জনের। করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৪০ লাখ ৬৫ হাজার ৩২৬ জনের আর এর ঠিক একদিন আগে বিশ্বে করোনায় মোট মৃত্যু হয় ৬ হাজার ২৯৩ জনের। ওই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ১১৯ জনের। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্ব বিপর্যস্থ । ২০১৯ সালের শেষে চীনে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর কখনো বৈশ্বিক সংক্রমণ বেড়েছে আবার কখনো কিছুটা কমেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েকদিন মোট বৈশ্বিক সংক্রমণ কিছুটা কমলেও আবার তা বেড়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ২৯ নম্বরে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উদ্বেগজনক হারে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে দেশে। বুধবার পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৪৭ হাজার ১৫৫ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৬ হাজার ৮৪২ জন। পরিসংখ্যান মোটেও সন্তোষজনক নয়। করোনার বর্তমানের সমীকরণ অনুযায়ী আমরা পূর্বের চেয়ে কঠিন সময় পার করছি। স্বাভাবিকভাবেই এখনই সময় করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়া। কিন্তু বাস্তবে চিত্র তার থেকে ভিন্ন। নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই, হয়ত নেই বার বার হাত ধোবার প্রবণতা ও সামাজিক দূরত্বের দূরত্ব। যে সকল পরিবারের স্বজন করোনা ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরই শুধু রয়েছে মানার প্রবণতা। ফলে আমরা যে বিপদের দিকে যাচ্ছি এটা মনে হয় নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু কেন? আমরা কি সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ নয়? আমরা কি বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ নয়? জীবনের মায়াতো সকল্রেই থাকার কথা। তাহলে কেন নিজের জীবনের কথা না ভেবে ঝুঁকি নিচ্ছি? কেন করোনার কঠিন সময়কে সহজ সময় ভেবে হেলায় কাটাচ্ছি? আপনিইতো একটি পরিবারের স্বপ্ন, একটি পরিবারের সম্বল তাই না কি? আপনি আক্রান্ত হলে এখনকার থেকে বিপদটা বেশি হবে তাই না কি? তাহলে কেন জেনে বুঝে জলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিব? করোনার বর্তমান ঢেউ মারাত্বক আকার ধারণ করছে। করোনা মহামারিতে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে চলে গেলে গত ১ জুলাই থেকে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তবে তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। সার্বিক দিক বিবেচনা করে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বিধিনিষেধ শিথিল করলো সরকার। মঙ্গলবার ১৩ জুলাই এক প্রজ্ঞাপন জারি করে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ৯ দিন বিধিনিষেধ শিথিল রাখার কথা জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আগামী ১৪ জুলাই মধ্য রাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত আগে আরোপিত সকল বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো। তবে প্রজ্ঞাপনে এ সময় সর্বাবস্থায় জনসাধারণকে সতর্ক অবস্থায় থাকা এবং মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করার কথাও বলা হয়েছে। একই প্রজ্ঞাপনে এর পরের ১৪ দিন ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার কথাও বলা হয়েছে। ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ চলাকালে আগের মতোই সবধরনের সড়ক, রেল ও নৌপথসহ সকল প্রকার গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। সেই সঙ্গে শপিংমল বা মার্কেটসহ সকল দোকানপাটও বন্ধ থাকবে। তবে বিধিনিষেধ না থাকলেও আমাদের মনের কাছে বাধা-নিষেধ জারি করে চলা উত্তম। কারণ বিধিনিষেধ না থাকলেও করোনা কিন্তু বিদায় নেয় নি। আসদে ঈদ করোনামুক্ত ঈদ উদযাপন না হলেও মনের আবেগেই আমরা মিশে যাব সীমিত পরিসরে হলেও। কখনো খেয়ালে কখনও বা অন্যের বেখেয়ালে চলবে কথা। তবে তার মাঝেও এই সময়েও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে নিজেকে ও আশেপাশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে পরামর্শ তা মেনে চলা উচিত । সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে অবশ্যই সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে। এছাড়া মাংস ও ডিম অবশ্যই যথাযথ তাপে ও ভালোমত রান্না করে খেতে বলা হবে। হাঁচি ও কাশির সময় অবশ্যই হাত বা টিস্যু দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে। এরপর টিস্যু ফেলে দিতে হবে এবং অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে। যে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার পর হাত ধুতে হবে। কোনো প্রাণির যতœ নিলে বা স্পর্শ করলে ও প্রাণিবর্জ্য ধরার পরও হাতে ধুতে হবে। শরীরে যে কোনো সংক্রমণ এড়াতে রান্না ও খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধুয়ে নিতে হবে। নিজের পাশাপাশি অন্যকে সুরক্ষিত রাখতে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়েছে ডবিøউএইচও। ব্যবহার করা টিস্যু খোলা ঝুড়ি বা ডাস্টবিনে না ফেলে ঢাকনা রয়েছে এমন ঝুড়িতে ফেলতে হবে। হাতে গøাভস না পরে বা নিজে সুরক্ষিত না থেকে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির মুখ ও দেহ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একইভাবে গবাদিপশু ও বন্যপশুকে ধরার আগেও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। রান্নাঘরের কাজেও বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলছে । কাঁচা মাংস, সবজি, রান্না করা খাবার কাটার জন্য ভিন্ন চপিং বোর্ড ও ছুরি ব্যবহার করতে হবে। কাঁচা মাংস, সবজি ও রান্না করা খাবার হাতে ধরার আগে অবশ্যই প্রত্যেকবার হাত ধুয়ে নিতে হবে। রোগে ভুগে মারা যাওয়া বা অসুস্থ প্রাণীর মাংস একেবারেই খাওয়া চলবে না। তবে রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন এলাকাতেও উপযুক্ত তাপে ও ভালোভাবে সিদ্ধ করা মাংস খেলে ঝুঁকি নেই। কাঁচা বাজারে গিয়ে কোনো প্রাণী ও প্রাণীর মাংস হাতে ধরলে দ্রুত হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। কাঁচা বাজারে অবস্থানের সময় অযথা মুখে-চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কাজের জায়গাটি দিনে অন্তত একবার হলেও পরিষ্কার বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পরিধেয়টি অবশ্যই প্রতিদিন বদল করতে হবে এবং ধুতে হবে। সংক্রমণ এড়াতে হাতে গøাভস ব্যবহার করা ভালো। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কের মধ্যে ভ্রমণ বিষয়েও সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদি জ্বর-সর্দি অনুভূত হয়, তাহলে যে কোনো ভ্রমণ বাতিল করাই ভালো। পাশাপাশি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও ওষুধ খেতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কারো সঙ্গে ঘনিষ্ট হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি মাস্ক ব্যবহার করা হয়, তবে নাক ও মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে। একবার মাস্ক পরলে তা বার বার স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একবার মাস্ক ব্যবহারের পর ফেলে দিতে হবে। মাস্ক ধরার পর হাতে ধুয়ে নিতে হবে। যদি ভ্রমণের সময় অসুস্থ বোধ হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। এর আগে রোগের ইতিহাস থাকলে সেটাও চিকিৎসককে জানাতে হবে। যেখানে সেখানে বা জনসমাগমের স্থানে থুথু ফেলা যাবে না। অসুস্থ প্রাণী ধরা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। করোনামুক্ত পৃথিবীর আহবান-বন্দনা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। কারণ এমন পৃথিবী কারো কাম্য নয়, কাম্য হতেও পারে না। তবুও প্রকৃতি যেন আমাদের মুক্তি দিচ্ছে না। তাই প্রকৃতি থেকে করোনার বিদায় দিতে আমাদেরই কঠোর হতে হবে। বাঁচতে হলে আমাদেরই মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, মানতে হবে মনের বিধিনিষেধ। ## লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট। gopalodikari1213@gmail.com ০১৭২৩-০৯১২১৩

No comments