আবারো বাড়ি ফেরার ঢল
ঘনিয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কর্মজীবী মানুষের বাড়ি ফেরার ঢল। রাজধানী ঢাকা ছাড়তে তারা ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন টার্মিনাল ও ঘাটে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউন শিথিল হতে পারে। তার আগেই অনেকে ভিড় এড়াতে আগেই ফিরে যেতে চান গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু দূরপাল্লার বাস ও যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প উপায়ে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। তাই গাবতলী পেরিয়ে আমিনবাজার আর সায়েদাবাদ পেরিয়ে শনিরআখড়ায় হাজারো মানুষের ভিড়। এছাড়া মাওয়া ও পাটুরিয়া লঞ্চঘাটেও বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ছিল।
আগামী ২১ জুলাই বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে। এর আগে সরকার গত ১ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন ঘোষণা দেয়। ১৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে এ লকডাউন। পরের দিন ১৫ জুলাই থেকে সরকার ঈদকে কেন্দ্র করে লকডাউন শিথিল করতে পারে। ওই দিন থেকে গণপরিবহনও চলাচল করতে পারে। তাই সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই গ্রামে যাওয়া মানুষের সমাগম বাড়ছে। বিশেষ করে রাজধানীর কল্যাণপুর, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালীসহ বিভিন্ন টার্মিনালে মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন।
এদিকে গণপরিবহন না চললেও বিভিন্ন উপায়ে তারা ফিরছেন বাড়ি। বিশেষ করে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে তারা যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি। গাবতলীতে গ্রামে যাওয়া কয়েকজন জানান, তারা উত্তরবঙ্গের জেলা গাইবান্ধায় যাবেন। এখান থেকে মাইক্রোবাসে ১৫০০ টাকা করে ভাড়া। ঢাকায় কাজ নেই, তাই তারা রওনা হয়েছেন।
তারা জানান, কঠোর লকডাউনের ভেতরও তারা একটি বিল্ডিংয়ের কনস্ট্রাকশনের কাজ করছিলেন। কাজ শেষে তারা চলে যাচ্ছেন। আবার যখন ঠিকাদার ডাকবেন তখন আবার আসবেন।
কথা হয় পাবনাগামী কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে। তারা বলেন, পাটুরিয়া পর্যন্ত যেতে পারলেই কোনো না কোনোভাবে তারা যেতে পারবেন। এ জন্য তারা এখানে এসেছেন। তারা বলেন, পাটুরিয়া পর্যন্ত একেক জনের ভাড়া ৫০০ করে চাচ্ছে। কিছু কম হলে তারা যাবেন।
আমিনবাজারে হাজারো মানুষের অপেক্ষা : আমিনবাজার ব্রিজ পার হলেই দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। হাজার হাজার মানুষ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। সেখানে সহজেই মিলছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল।
পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে কুষ্টিয়া যাবেন হাসেম। আমিনবাজার এসে তিনি গাড়ির অপেক্ষা করছেন। হাসেম জানান, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে আগেভাগেই বাড়ি চলে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারের কড়াকড়িতে ভোগান্তি হচ্ছে। আমিনবাজার থেকে সহজেই ঘাট পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছে। ঘাটে গিয়ে ছোট লঞ্চ, ট্রলারে নদী পাড়ি দেব। নদী পার হতে পারলেই আর কোনো চিন্তা নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে চেপেই যাত্রীরা যাচ্ছেন আরিচা-পাটুরিয়া ঘাটের দিকে। এজন্য প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মোটরসাইকেলে জনপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় যাত্রীদের গাবতলী থেকে হেঁটে আমিনবাজার গিয়েই ঘাটের গাড়ি ধরতে হচ্ছে।
মিন্টু যাবেন পাবনা। বোনকে নিয়ে রওনা হয়েছেন অনিশ্চিত যাত্রায়। লঞ্চ ও ট্রলার চলছে কিনা তাও জানেন না। তিনি বলেন, বাড়িতে যাচ্ছি অসুস্থ মায়ের জন্য। মা অসুস্থ না থাকলে এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে যেতাম না। মূলত মাকে দেখতেই বাড়ি যাচ্ছি।
মো. রফিক নামে পাটুরিয়াগামী এক যাত্রী বলেন, গাড়ি চলাচল না করায় বিপদে পড়েছি। ফার্মগেট থেকে মোটরসাইকেলে গাবতলী এসেছি। গাবতলী থেকে আমিনবাজার পায়ে হেঁটে এসেছি। এখান থেকে লেগুনা করে যাব।
এ বিষয়ে গাবতলী ট্রাফিক সিগন্যালের দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মো. মাহবুব বলেন, গাবতলী থেকে আমরা কাউকে ছাড়ছি না। একেবারে জরুরি ছাড়া এবং মানবিক বিষয় ছাড়া কাউকে গাবতলীর বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে কেউ পায়ে হেঁটে যেতে চাইলে আর না করতে পারছি না।
এদিকে মহাখালী টার্মিনালেও ঢাকা ছাড়া মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে। জামালপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার মানুষের রুট এই মহাখালী টার্মিনাল। বাস না চললেও বাসের হেলপার, কন্ট্রাক্টররাই তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি সায়েদাবাদ টার্মিনালেও ঘরমুখো মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে। কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুরসহ বেশকিছু জেলার মানুষের সমাগম দেখা যায়। এখানেও সিএনজি, প্রাইভেট মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন উপায়ে মানুষ ছুটছেন গ্রামের বাড়ি।
No comments