× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



গুপ্তধনের খবরে মিলল পুরোনো ‘মটকা’

পুরোনো বাড়িটি ভেঙে করা হবে বহুতল ভবন। বাড়ির একাংশের দেয়াল ও ছাদের অপসারণ শেষ। এরপর মেঝে খননের কাজ শুরু হয়। মেঝে খুঁড়তেই পাওয়া যায় মাটির তৈরি ‘মটকা’ (একধরনের কলস) । অনেকে মনে করেছিলেন ‘গুপ্তধন’। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। জড়ো হতে থাকে উৎসুক মানুষ। ছুটে আসেন প্রকৌশলী, প্রত্নতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞরা। প্রাথমিক যাচাই শেষে জানালেন, এগুলো গুপ্তধন নয়, তবে এর গুরুত্ব এর চেয়েও বেশি। তাঁদের মতে, বাড়িটি অন্তত ৩০০ বছরের পুরোনো। বাড়ির মেঝের নিচে এভাবে কলস ব্যবহারের তেমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই। চমৎকার এই নির্মাণশৈলি ও নির্মাণকাল বিবেচনায় বাড়িটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা জরুরি। Advertisement
এই স্থাপত্য নিদর্শনের খোঁজ পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটার নজু মিয়া লেন এলাকায়। ১২ শতক জায়গার ওপর বাড়িটি তৈরি করেছিলেন হাজী শরীয়ত উল্লাহ সওদাগর নামের এক ব্যবসায়ী। এখন তাঁর বংশধরেরা থাকেন। গতকাল শনিবার দুপুরে বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাড়িটির যেটুকু অংশ অক্ষত রয়েছে, তা সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। উদ্ধার করা মাটির কলসগুলোর আকার ও উচ্চতায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। তবে অধিকাংশ পাত্রের উচ্চতা গড়ে দুই ফুট। মুখের ব্যস ৫৬ ইঞ্চি। একেকটি পাত্রের ওজন ১০ থেকে ১৫ কেজি। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৩৪টি কলস উদ্ধার করা হয়। মেঝের নিচে আরও কলস দেখা গেছে। Advertisement
গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক মেঝে খননের কাজ করছেন। তাঁদের ঘিরে রয়েছে এলাকার অনেক মানুষ। সতর্কতার সঙ্গে খনন করে একের পর এক কলস বের করে নিয়ে আসেন। মেঝের নিচে উপুড় করে বসানো ছিল এসব কলস। দুটি কলসের মধ্যবর্তী জায়গায় ছিল মাটি। এগুলো তোলার পর এক কোনায় রাখা হয়। বাড়ির অক্ষত থাকা অংশের দেয়ালে দেয়ালে পরগাছা জন্মেছে। দরজা-জানালাগুলোও ভেঙে পড়েছে। ছাদ ও দেয়াল থেকে ইট-সুরকি বের হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সাবেক উপাচার্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ অঞ্চল একসময় খুব ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসপ্রবণ ছিল। উপুড় করে মাটিতে বসানো খালি কলস জলোচ্ছ্বাসের সময়ে ভাসমান ভিত হিসেবে কাজ করতে পারে। আর ভূমিকম্প হলে মাটি ও ভবনের মাঝে কম্পনের প্রভাব হ্রাসে কাজ করতে পারে। হাজী শরীয়ত উল্লাহ সওদাগরের দুটি জাহাজ ছিল। তিনি রেঙ্গুন থেকে নৌপথে পণ্য আনা-নেওয়ার ব্যবসা করতেন। তিনিই একতলা বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। এ জন্য রেঙ্গুন থেকে শ্রমিক ও পোড়া মাটির তৈরি কলসগুলো আনা হয়েছিল। বাড়িটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল ইট, সুরকি ও সেগুন কাঠ। এই বাড়ির দেয়ালগুলো প্রায় ৩০ ইঞ্চি পুরু। সময়ের পরিক্রমায় ভবনটি দুই পরিবারের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। একটি অংশ পড়ে হাজী বাদশা মিয়া সওদাগরের বংশধরদের ভাগে। অন্য অংশের মালিক তাঁর ভাই হাজী আবুল বশর সওদাগরের সন্তানেরা। এখন হাজী বাদশা মিয়া সওদাগরের সন্তানেরা তাঁদের অংশ ভেঙে নতুন করে সাততলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। গত ৩ জুন পুরোনো বাড়ির ছাদ ও দেয়াল অপসারণের কাজ শুরু হয়। তা শেষ হওয়ার পর গত মঙ্গলবার থেকে মেঝে খননের কাজ শুরু করেন শ্রমিকেরা। গতকাল এই বাড়িতে এসেছিলেন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী পরিচালক আহমেদ আবদুল্লাহ। তিনি জানান, মাটির পাত্রগুলোর রং ও আকার দেখে মনে হচ্ছে বাড়িটি ২৫০ থেকে ৩০০ বছর আগে নির্মিত। এভাবে কলস ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিলে মুন্সিগঞ্জের ইন্দ্রাকপুরে। সেখানে মোগলদের আমল মীর জুমলা খাঁ দুর্গ তৈরিতে মটকা ব্যবহার করেছিলেন। এখন বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য ঘেরাও দেওয়া হবে। এরপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হবে। বাদশা মিয়া সওদাগরের ছেলে মো. ফারুক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বাড়িটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছিল। আর পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেড়ে চলছে। এ জন্য পুরোনো বাড়ি ভেঙে নতুন করে সাততলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য সিডিএর কাছ থেকে নকশা অনুমোদনও নেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু করতে গিয়ে মটকাগুলো পাওয়া যায়। এ অবস্থায় সরকার বাড়িটি সংরক্ষণ করবে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে, জানান ফারুক। এ জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণও দেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসক তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন। সূত্র: প্রথম আলো

No comments