শিল্প-কারখানা খুলছে রোববার
চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে আগামীকাল ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খোলা রাখার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গতকাল শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে রপ্তানিমুখী কারখানাকে রোববার সকাল ৬টা থেকে বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত রাখার সিদ্ধান্ত জানায়। উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে এতদিন শিল্প কারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে অনড় ছিল সরকার। তবে তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব ধরনের শিল্প কারখানা খুলে দিতে সরকারের উচ্চ মহলে বারবার অনুরোধ করছিলেন শিল্পমালিকরা। গত বৃহস্পতিবার তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবারও অনুরোধ জানান।
এদিন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও ঢাকা চেম্বারের নেতারা সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে এক বৈঠকে এই অনুরোধ জানান। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর শঙ্কা, সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়া, বন্দরে জট, সার্বিক অর্থনীতিসহ সবকিছু বিবেচনা নিয়েই তারা এ অনুরোধ জানাতে বাধ্য হয়েছেন।
কারখানা খোলা রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের পর বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘এখন শুধু রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানাগুলোর রপ্তানি কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চলবে। কারখানার কর্মী ও শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ কারখানার শ্রমিক কারখানার আশপাশে অবস্থান করছেন। আপাতত তাদেরকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হবে। এর মধ্যে যারা বাড়ি চলে গেছেন, এসব শ্রমিক যদি আসতে পারেন তাহলে চলে আসবেন।
লকডাউন শিথিল হওয়ার পর দূরের শ্রমিকরা চলে আসবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কয়েকদিনের জন্য কারও চাকরি যাবে না, বেতনও কাটা যাবে না। সম্ভব হলে শ্রমিকরা অবশ্যই ফ্যাক্টরিতে চলে আসবেন। Advertisement
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ হারের কারণে কোরবানি ঈদের পরদিন ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে শিল্প কারখানা, সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অফিস আদালত বন্ধ রাখা হয়। ঈদের আগে লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিল্প কারখানা চালু ছিল।
চলমান লকডাউন ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান লকডাউন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বিষয়টি জানান।
তিনি বলেন, আমরা আরও ১০ দিন আগেই কেবিনেট মিটিংয়ে বিধি-নিষেধ বাড়ানোর সুপারিশ করেছি। যদিও এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, আমরা কীভাবে এই সংক্রমণ সামাল দেব? রোগীদের কোথায় জায়গা দেব? সংক্রমণ যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে কি পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব? অবস্থা খুবই খারাপ হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এসব বিবেচনায়ই আমরা বিধি-নিষেধ বাড়ানোর সুপারিশ করেছি। Advertisement
এখনো ঢাকায় ফিরছে মানুষ : করোনা প্রতিরোধে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই ঢাকায় ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ। গতকাল শুক্রবার গাবতলী ও আমিনবাজার ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি এড়িয়ে পায়ে হেঁটে, রিকশা, ভ্যানে করে ঢুকছেন মানুষ। চাকরি, টিকা নেওয়া কিংবা করোনা টেস্ট করতে ঢাকায় আসা এসব মানুষকে গুনতে হচ্ছে ৩ থেকে ৪ গুন বেশি ভাড়া। পরিবর্তন করতে হচ্ছে একাধিক যান। ঈদুল আজহার এক সপ্তাহের বেশি সময় পর এসব মানুষ ঢাকায় ফিরে পড়ছেন আরেক বিড়ম্বনায়, গণপরিবহন না থাকায় রিকশা হয়ে উঠেছে মূল পরিবহন। ইচ্ছামতো ভাড়া হাঁকছেন চালকরা।
সরেজমিন দেখা যায়, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর ঢাকা প্রবেশ পথ আমিন বাজার ও গাবতলীতে পুলিশের কঠোর নজরদারি আছে। গাড়ি ও মোটরসাইকেল তল্লাশি সবই চলছে। কিন্তু চেকপোস্টের পাশ দিয়ে হেঁটে চলে আসছে দূর-দুরান্ত থেকে ঢাকায় ফেরা যাত্রীরা। প্রবাসী শ্রমিক নাজির পাটওয়ারী বলেন, রিকশায় সাভার থেকে হেমায়েতপুর আসলাম ৩০ টাকা দিয়ে। পরে আরেক রিকশায় আমিনবাজার আসলাম ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে। এখন হাতিরঝিল যাব, রিকশায় সাড়ে ৩০০ টাকা ভাড়া চাইছে। ঢাকায় আসার কারণ যানতে চাইলে তিনি বলেন, কাল আমার ফ্লাইট। এজন্য ঢাকায় আসছি। সকাল ৬টায় নাটোর থেকে রওনা দিয়ে দুপুর ১২টায় আমিন বাজার ব্রিজে আসেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাইফুল ইসলাম। আমিন বাজার চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের তিনি বলেন, অক্সিজেন কোম্পানিতে চাকরি করি। অফিস থেকে ঢাকায় এসে কাজে যোগদান করতে বলেছে। ঢাকায় আসতে কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। Advertisement
রাজীব নামের এক গার্মেন্টকর্মী বলেন, অফিস থেকে বলছে সব কিছু খুলে দেবে তাই মানিকগঞ্জ থেকে চলে আসতে হলো। তিনি বলেন, অন্য সময় আসতে ১৫০ টাকার মতো খরচ হয়, তবে এবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসতে ৫০০ টাকার লাগল। আমিন বাজার ব্রিজের গাবতলী পয়েন্টে তল্লাশি করত দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। যারা কারণ দেখাতে পারছে তাদের যেমন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে তেমনি অকারণে বের হলে যানবাহনে গুনতে হচ্ছে মামলা। আর ব্রিজের মাথায় রিকশা-ভ্যানকে যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।
বিধিনিষেধে জরিমানা গুনেও রাস্তায় নামছে মানুষ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে বিনা প্রয়োজনে মোটরসাইকেল বা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হলেই জরিমানা গুনতে হচ্ছে। অনেককে মামলা দিয়ে গ্রেফতারও করা হচ্ছে। তবে চেকপোস্টে জরিমানা দিয়ে ফের সড়কে নামছে মানুষ। গতকাল শুক্রবার কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টমদিনে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সড়কে অন্য দিনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কিছুটা কম ছিল। পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ চেকপোস্টই ছিল ফাঁকা। দুপুর ১টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় দুজনকে মামলা দেন মিরপুর-১০ নম্বরের চেকপোস্টের ট্রাফিক পুলিশ। তাদের কাছ থেকে চার হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
ট্রাফিক সার্জেন্ট রফিকুল ইসলাম বলেন, বিধিনিষেধ প্রতিপালনে জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো যানবাহন সড়কে না চালানোর নির্দশনা থাকলেও অনেকেই ব্যক্তিগত যান নিয়ে বের হচ্ছেন। তাদের মামলা ও জরিমানা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা ফের সড়কে নামছেন। মিরপুরের বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লা ও বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট থাকলেও নেই পুলিশ। মিরপুর-১০ নম্বরসহ বিভিন্ন চেকপোস্টে ব্যক্তিগত গাড়ি দেখলেই গতিরোধ করা হচ্ছে। চেকপোস্ট ট্রাফিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জানতে চাচ্ছেন—কেন বের হয়েছেন, কোথায় যাবেন? সুনির্দিষ্ট কারণ ও প্রমাণ দিতে না পারলে তাদের বাসায় পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া মিরপুর-১ নম্বর ও গাবতলী চেকপোস্ট পুলিশের তল্লাশি চোখে পড়েছে। Advertisement
ছুটির দিনে বের হয়ে রাজধানীতে গ্রেফতার ৩৮১ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হয়ে গতকাল শুক্রবার গ্রেফতার হয়েছেন ৩৮১ জন। এছাড়া ১০৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে ৬৯ হাজার ৯৪০ টাকা। একই সঙ্গে ট্রাফিক বিভাগ ৩২১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করেছে ৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এ নিয়ে আট দিনে রাজধানীতে মোট গ্রেফতার হলেন চার হাজার ৫ জন। এসব তথ্য জানান ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে সকাল থেকে ডিএমপির ৮টি বিভাগে রমনা, লালবাগ, মতিঝিল, ওয়ারী, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা এলাকায় সরকারি নিয়ম অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় ৩৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর ডিএমপি পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাফিক বিভাগ ৩২১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করেছে ৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
No comments