× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



চাঁদাবাজির অস্ত্র আইপি টেলিভিশন

সারা দেশে ব্যাঙের ছাড়ার মতো ছড়িয়ে রয়েছে কয়েক হাজার আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) টেলিভিশন। টিভি চ্যানেল খুলে একটা শ্রেণি নিয়োগবাণিজ্য করছে। আর তাদের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কথিত সাংবাদিকরা চাঁদাবাজি করছেন। নিরীহদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের কারণে মূলধারার সাংবাদিকদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফেইসবুক, ইউটিউবে পেজ ছাড়াও পাড়ামহল্লায় আইপি টিভির ভিড় বেড়েই চলেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয়েছে, রাজধানী ছাড়াও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য আইপি টিভি। সম্প্রতি মহিলা লীগের উপকমিটির পদ হারানো হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করার পর অবৈধ আইপি টিভির বিষয় আলোচনায় এসেছে। দীর্ঘদিন ‘জয়যাত্রা’ নামে আইপি টিভির নাম করে দেশ-বিদেশ থেকে তার প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকার মতো চাঁদা আসত বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভুঁইফোড় সংগঠনের মতোই আইপি টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এদিকে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আইপি টেলিভিশনের কোনো হিসাব তাদের কাছে নেই। এটি পরিচালনায় কোনো নীতিমালাও নেই। ফলে যেগুলোর কার্যক্রম চলছে, সবই অবৈধ। তবে নীতিমালা তৈরির জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই এ কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে আইপি টিভির নিবন্ধনের জন্য ৫০০ আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অবৈধ আইপি টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব টেলিভিশন গুজব রটায়, অসত্য তথ্য পরিবেশন করে। নিয়মনীতিহীন এসব টিভির বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে দৌরাত্ম্য : সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইপি টিভির দৌরাত্ম্য রয়েছে। কথিত চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে কয়েক হাজার নামধারী সাংবাদিক চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। দিনরাত তারা ছোটাছুটি করে। প্রেস ক্লাব, বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে তাদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। এতে বিপাকে পড়েন মূলধারার সাংবাদিকরা। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলছে, সারা দেশে কয়েক হাজার অবৈধ আইপি টেলিভিশন রয়েছে। তার মধ্যে বিভাগীয় শহরগুলোতে এর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ২৫টি আইপি টিভি থাকার তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। করোনাকালে ‘লকডাউনে’ রাস্তায় বের হলে প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলে বিচিত্র নামের আইপি টিভির স্টিকার দেখা যায়। তারা স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন অফিসে ঘোরাঘুরি করেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল : পুলিশ ও র‌্যাবের দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, আইপি টিভি মূলত ঘরোয়াভাবে কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কম্পিউটার থেকে সম্প্রচারের জন্য ভিডিওচিত্র ফ্রি স্যাটেলাইট স্টেশনে পাঠানো হয়। সেখান থেকে স্যাটেলাইটে পাঠানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে পরিচয়ে যেকোনো অনুষ্ঠানেই সাংবাদিক দেখা যায়। তাদের চাপে আসল টেলিভিশনগুলোকে বিপাকে পড়তে হয়। হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের পর ওইসব অবৈধ আইপি টিভিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে। এজন্য তথ্য মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির সহায়তা চাওয়া হবে। তারা আরও জানান, অবৈধ টেলিভিশন মানেই চাঁদাবাজি। তারা নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে চাঁদাবাজি করছে। ইতিমধ্যে আমরা একটি তালিকা তৈরি করেছি। ওইসব টেলিভিশনের কথিত সাংবাদিকের নাম আছে। সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইলও করেছেন তারা। মূল উদ্দেশ্যই থাকে চাঁদাবাজি। কোথাও কোনো অপরাধ ঘটলে, অপরাধী ও ভিকটিমকে নানারকম হয়রানির ফাঁদে ফেলেন তারা। আইপি টিভির অন্যতম বাণিজ্য-পরিচয়পত্র কেনাবেচা। জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রামপর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগের নামে তারা পরিচয়পত্র বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এসব টিভি থেকে টাকা দিয়ে যারা আইডি কার্ড কিনছেন, তারা এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের সঙ্গেই যুক্ত হচ্ছেন। শুধু প্রতারণার পাশাপাশি এসব টিভি বিভিন্ন ঘটনায় গুজব, অপপ্রচার ছড়িয়ে রাষ্ট্রের অনেক ক্ষতিও করছে। এছাড়া এসব আইপি টিভির সংবাদ সাধারণ মানুষকে প্রায়ই বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়। Advertisement
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইপি টিভির বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে বিটিআরসিসহ অন্য কোনো সংস্থা সহায়তা চাইলে আমরা এগিয়ে আসব। এ ক্ষেত্রে পুলিশসহ অন্য সংস্থাগুলোও এগিয়ে আসবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীরের জয়যাত্রা টিভিটি ছিল অবৈধ। আইপি টিভির নামে চলে আসছিল চাঁদাবাজি। ওই টিভির অফিসে অভিযানের সময় র‌্যাব জানতে পারে হেলেনা জাহাঙ্গীর একটি শক্তিশালী সাইবার টিম পরিচালনা করতেন। এই টিমে ১৫-২০ জনের নাম পাওয়া গেছে। এই সাইবার টিম একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তার নামে প্রচার-প্রচারণা চালাতেন। তারা নিজেরাই লাইক, শেয়ার ও হেলেনার পক্ষে পজিটিভ কমেন্ট করতেন।’ র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ বলেন, ‘জয়যাত্রা আইপি টিভির সব ধরনের সেটআপ থাকলেও এ চ্যানেলের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তাদের মতো আরও অনেক আইপি টিভি রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছি। শিগগির বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে।’ Advertisement
আইপি টিভির মালিক কারা : আইপি টিভির অধিকাংশ মালিক ব্যবসায়ী ও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা এসব টিভির মাধ্যমে নিজেদের প্রচারণা চালান। তাদের উদ্দেশ্য থাকে ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়া। এই টিভি ব্যবহার করে সফলও হয়েছেন অনেকে। এদের অন্যতম ছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এসব টিভির দাপটে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারও বিরক্ত। সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন মহল প্রতারণার দায়ে অবৈধ আইপি টিভি বন্ধের দাবি করছেন। এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (টিভি-২) রুজিনা সুলতানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০২০ সালে অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য যে নীতিমালা করা হয়েছিল, তার মধ্যেই আইপি টিভির বিষয় রয়েছে। এ নীতিমালার আলোকেই আইপি টিভি নিবন্ধনের কাজ করা হবে। নতুন করে আইপি টিভির জন্য কোনো নীতিমালা করা হয়নি। নিবন্ধনের জন্য অনেকে আবেদন করেছেন। প্রথম পর্যায়ে অনলাইন ও ম্যানুয়ালি পাঁচ শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। সেগুলো নিবন্ধনের জন্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। নতুন কিছু আবেদন এসেছে।’Advertisement
দেশে কতটি আইপি টিভি আছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত একটি আইপি টিভিরও অনুমোদন তথ্য মন্ত্রণালয় দেয়নি। ফলে সঠিক কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।’ তবে মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রোগ্রামার মো. আবদুল্লাহ হেল কাফি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইপি টিভির কোনো নিবন্ধন নেই। কারণ তথ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা করেনি। নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। তথ্যমন্ত্রী দ্রুত নীতিমালা করে আইপি টিভিগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে নির্দেশনা দিয়েছেন। আইপি টিভি নিজস্বভাবে চালায়। নীতিমালা শেষে নিবন্ধন দেওয়া হলে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সূত্রঃ দৈনিক দেশরুপান্তর’Advertisement

No comments