× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনা

গত তিন দিনে ঢাকা থেকে তিনজন মডেল ও অভিনেত্রীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে গ্রেফতার হয়েছেন খ্যাতনামা একজন নারী ব্যবসায়ী এবং আরেকজন নারী চিকিৎসক। তাদের প্রায় প্রত্যেকের কাছ থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে মাদকদ্রব্য। এছাড়া অধিকাংশের বিরুদ্ধেই সমাজের উচ্চবিত্ত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সবশেষ গত রোববার (১ আগস্ট) দিবাগত রাতে রাজধানীর বারিধারা ও মোহাম্মদপুরে পৃথক দুটি অভিযানে বিপুল পর িমাণ মাদকসহ মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর আগে গত ৩১ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে চিত্রনায়িকা একাকে আটক করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। তার বাসা থেকে ইয়াবা, বিদেশি মদের বোতল ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এর ঠিক দুই দিন আগে ২৯ জুলাই রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয় সমালোচনার মুখে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য পদ হারানো ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে। অভিযান শেষে র‌্যাব জানায়, তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ, বিয়ার, বিদেশি মুদ্রা, চাকু, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ১ জুলাই বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগে ইশরাত রফিক ঈশিতা নামে এক নারী চিকিৎসককে গ্রেফতার করে র‌্যাব। Advertisement
এর আগে গত ১৩ জুন ঢাকার বোটক্লাবে নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ করেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের আরেক জনপ্রিয় নায়িকা পরীমনি। এ অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন আহমেদ ও অমিকে গ্রেফতারও করা হয়। পরে তারা জামিনও পান। এরই মধ্যে পরীমনির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্লাবে গিয়ে মদ্যপ অবস্থায় তুলকালাম করার অভিযোগ আসে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। এছাড়া গত ১১ মার্চ সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন পুলিশ জানায়, ওই ব্যবসায়ীর মতো আরও অনেক প্রবাসী স্বর্ণার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ধনী ব্যক্তিদের টার্গেট করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই ছিল রোমানার প্রধান ব্যবসা। মডেল পিয়াসা ও মৌয়ের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ফাঁদ : মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে গ্রেফতারের পর ডিবি পুলিশ জানায়, তারা দিনের বেলা ঘুমাতেন আর রাত কাটাতেন পার্টি করে। ধনীদের টার্গেট করে পার্টির নামে বাসায় ডেকে আনতেন। এরপর তাদের সঙ্গে কৌশলে আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করতেন। তাদের গ্রেফতারের পর ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, পিয়াসা ও মৌ দু’জনই একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে আমরা অনেক ব্ল্যাকমেলিংয়ের অভিযোগ পেয়েছি, সেসব ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তাদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। এই দুই মডেল হচ্ছেন রাতের রানী। তারা দিনের বেলায় ঘুমায় এবং রাতে এসব কর্মকা- করেন। তারা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পার্টির নামে বাসায় ডেকে আনতেন। এরপর তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও তুলে রাখতেন। পরবর্তী সময়ে সেসব ভিডিও এবং ছবি ভিক্টিমদের পরিবারকে পাঠাবে বলে ব্ল্যাকমেইলিং করে টাকা হাতিয়ে নিতেন। Advertisement
যেভাবে গ্রেফতার হন দুই মডেল : গত ১ আগস্ট রাতে প্রথমে রাজধানীর বারিধারা এলাকায় ৯ নম্বর রোডে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলের সাবেক স্ত্রী মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। এ সময় পিয়াসার ঘরের টেবিল থেকে চার প্যাকেট ইয়াবা জব্দ করা হয়। পরে তার রান্নাঘরের ক্যাবিনেট থেকে নয় বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। অভিযানের এক পর্যায়ে ফ্রিজ খুলে একটি আইসক্রিমের বাক্স থেকে সিসা তৈরির কাঁচামাল ও বেশ কয়েকটি ই-সিগারেট পাওয়া যায়। এর পর পরই দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আরেক মডেল মৌয়ের মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান শুরু করে ডিবি পুলিশ। এ সময় ওই বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ভাষ্য, তার বাসায় বারের সন্ধান পাওয়া গেছে। পিয়াসা ও মৌ তিন দিনের রিমান্ডে : গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশান থানায় মডেল পিয়াসার বিরুদ্ধে ও মোহাম্মদপুর থানায় মৌয়ের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ। এরপর মোহাম্মদপুর থানায় মাদক আইনে করা মামলায় মডেল মৌকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. আশেক ইমাম তা তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় মডেল পিয়াসাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নায়িকা একার নিয়মিত মাদক সেবন : এক সময় ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা একা। দীর্ঘদিন পর্দার আড়ালে থাকলেও নেতিবাচক শিরোনামে ফের আলোচনায় আসেন তিনি। গৃহকর্মী নির্যাতনের দায়ে ৩১ জুলাই রাতে তাকে আটক করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। পরে তার বাসা থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তিনি কারাগারে আছেন।
Advertisement হাতিরঝিল থানা সূত্রে জানা গেছে, একাকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখনও তিনি মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিলেন। থানায় তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। নিয়ন্ত্রণহীন মেজাজে থানার ভেতরে কখনো সংবাদকর্মী আবার পুলিশ সদস্যদের ওপর চড়াও হচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে অসুস্থতার ভান করে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ধাক্কা মেরে দেন একা। হাতিরঝিল থানার ওসি আবদুর রশিদ বলেন, একা তার গৃহকর্মীকে মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তিনি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ রাখেন। পরে পুলিশ দরজা ভেঙে একাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ সময় তার বাসা থেকে পাঁচ পিস ইয়াবা, ৫০ গ্রাম গাঁজা এবং অর্ধেক বোতল মদ পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিয়মিত মাদক সেবনের কথা স্বীকার করেন এই অভিনেত্রী। হেলেনার দুই অডিও ক্লিপ ফাঁস : এদিকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। তার এই কথোপকথনের তথ্য ধরে তদন্ত করছে পুলিশ ও র‌্যাব। একটি অডিও ক্লিপসে হেলেনা জাহাঙ্গীর তার ব্যক্তিগত সহকারীকে বলছিলেন মেহেদী নামের একজন মালয়েশিয়া প্রবাসীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নেওয়ার জন্য। টাকা দিলে ওই প্রবাসীকে জয়যাত্রা টেলিভিশনের মালয়েশিয়ার ব্যুরো চিফ বানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান হেলেনা।Advertisement
ফাঁস হওয়া আরেকটি অডিও ক্লিপসের অপরপ্রান্তের ব্যক্তি হেলেনাকে বলছিলেন, কাল পরশু নতুন একটা গেস্ট পাঠাব। বিএনপির এক নেতা আছে তো! তখন হেলেনা পাল্টা প্রশ্ন করেন, বিএনপি না আওয়ামী লীগ? অপরপ্রান্ত থেকে বলা হচ্ছিল, আরে বিএনপির। মোংলার রামপাল আছে না? ওখানের এমপি ইলেকশন করছিল। তখন হেলেনা বলছিলেন, ‘টাকা টুকা দেবে?’ সেই লোক বলছিলেন, আরে নাহ। এমনি যাবে। হেলেনার উত্তর ছিল, টাকা না দিলে একেবারে ভাইরাল করে দেব। একদম। পরবর্তীতে এমপি ফাইনাল। আমি তো ভাইরাল করার ওস্তাদ। অপরপ্রান্ত থেকে ওই ব্যক্তি বলছিলেন, প্রাথমিক স্টেজে তো চাওয়া যায় না! আগে ইনভলব করি। এদের তো পরে মুরগি বানাব। ৬ দিনের রিমান্ডে ঈশিতা : বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ইশরাত রফিক ঈশিতা (৩৪) ও তার সহযোগী শহিদুল ইসলামের (২৯) ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঈশিতা ও তার সহযোগী শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহ আলী থানার পৃথক দুই মামলায় এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

No comments