× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



৭৮ বছর পর মা-ছেলের দেখা

অভিমান ক’দিন থাকে? কয়েক ঘণ্টা, কয়েক দিন, মাস কিংবা বছর। অভিমানে বাড়ি ছেড়ে ৭৮ বছর ফেরেনি এমন ঘটনা বোধ হয় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শুনতে বিচিত্র হলেও তাই ঘটেছে আব্দুল কুদ্দুস মুন্সীর বেলায়। শৈশবে অভিমান করে বাড়ি ছেড়েছিলেন আব্দুল কুদ্দুস। সেটা ৭৮ বছর আগের ঘটনা। ছেলের পথ চেয়ে থাকতে থাকতে মারা গেছেন বাবা। তবে আশা ছাড়েননি মা। বয়স একশ পেরোলেও মায়ের বিশ্বাস ছিল, অভিমান ভেঙে ছেলে ঠিকই ফিরবে, মা বলে ডাকবে তাঁকে। ঘটলও তাই। প্রায় ৮ দশক পর ছেলের মা ডাক শুনেছেন জননী। এত বছর পর মায়ের খোঁজ মিলল কীভাবে? ছেলে জানালেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে। মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথাও হয়েছে তাঁর। আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী জানান, কিছুদিন আগে আইয়ুব আলী নামের পরিচিত একজনের কাছে তার হারিয়ে যাওয়া গল্প বলেন তিনি। সেই ঘটনাটি ফেসবুক আইডিতে আপলোড করেন আইয়ুব আলী। সেখানে তিনি শুধু পিতা-মাতা ও নিজ গ্রাম বাড্ডার নাম বলতে পারেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দারা সাড়া দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আব্দুল কুদ্দুসকে খুঁজে পান তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কথার একপর্যায়ে নিজের হারিয়ে যাওয়ার গল্পও শোনান আব্দুল কুদ্দুস। যখন তিনি অভিমান করে ঘর ছাড়েন তখন তাঁর বয়স ছিল সাত। এখন তিনি ৮৫ বছরের বৃদ্ধ। আব্দুল কুদ্দুস জানান, ৭৮ বছর আগে ফুপার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রাজশাহীর বাগমারায় বেড়াতে আসেন তিনি। সেখানে প্রায় ২ বছর থাকেন। একদিন ফুপুর সঙ্গে মনোমালিন্য হয় তাঁর। খুব মারধর করেন ফুপু। সেই রাগে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে আর পাওয়া যায়নি। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি ফুপার বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে আত্রাই সিংসাড়া গ্রাম পর্যন্ত চলে আসি। সন্ধ্যার দিকে খয়মুন নামের এক বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা হয়। তিনি ভিক্ষা করে সংসার চালান। আমি তাঁকে নিজের কষ্টের কথা বলি। আমার কথা শুনে ওই মহিলা তাঁর গ্রামের জনৈক সাদেকের ছেলে সাদেকের বাড়িতে নিয়ে যান আমাকে। সাদেকের কোনো সন্তান ছিল না। তাই তিনি আমাকে বাড়িতে ঠাঁই দেন। সেখানেই আমি বড় হই। এমনকি তাঁরাই আমাকে খতনা দেন। পরে পনেরো বছর বয়সে একই এলাকার চৌউড়বাড়ি গ্রামে তাঁর এক আত্মীয়ের মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দেন সাদেক। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে বারুইপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করি। সেখানে আমার তিন ছেলে ও ৫ মেয়ে হয়। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। তিন ছেলের মধ্যে ২ ছেলে দেশের বাইরে থাকে। মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে কুদ্দুস বলেন, আমার মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে প্রথম যখন কথা বলি তখন মা আমাকে বলে তুই আমার হারিয়ে যাওয়া আব্দুল কুদ্দুস? তোর ছোট বেলায় হাত কেটে গিয়েছিল। মায়ের মুখে এ কথা শোনার পরে আমি বলি, মা তোর কুদ্দুসের কোন হাত কেটে গিয়েছিল? তখন মা বলে বাম হাতের বুড়ো আঙুল কেটে গিয়েছিল। তখন বুঝতে পারি তিনিই আমার মা।

No comments