বিশ্বকাপে অনন্য কীর্তি তিন টাইগারের
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হতে আর তিন সপ্তাহও বাকি নেই। কিন্তু এখনই বিশ্বকাপ নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা। কে দল কেমন করবে এ নিয়ে চলছে আলোচনা। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোট ১৬টি দল খেলবে। এখন বাংলাদেশি সমর্থকরা স্বপ্ন দেখছেন বাকি ১৫ দেশকে টপকে ভালো কিছু করবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ইতোমধ্যেই দল ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশের। অভিজ্ঞ ও তরুণদের মিশেলে দল গঠন করা হয়েছে এবার। দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই তরুণ। তবে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের সংখ্যাও কম নয়। এবার বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে অভিজ্ঞ ও তরুণদের সমন্বয়ে ভালো কিছু করবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপটি হবে ২০ ওভারের বিশ্ব প্রতিযোগিতার সপ্তম আসর। এর আগে হয়েছে ৬টি বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের হয়ে এই ৬টি বিশ্বকাপের সবগুলোতে খেলেছেন মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি-বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। টানা ৬টি বিশ্বকাপ খেললেও সপ্তম আসরে থাকছেন না মাশরাফি-বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবাল। মাশরাফি অনেক আগেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি এখন আর জাতীয় দলের সঙ্গেই নেই তিনি। অপরদিকে তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপের দলের চিন্তায় রাখা হলেও তিনি ইনজুরির কারণ দেখিয়ে নিজেই সরে গেছেন।
তবে এবারের বিশ্বকাপের মাধ্যমে ৭টি আসরের সবগুলোতেই খেলতে যাচ্ছেন তিন টাইগার ক্রিকেটার। তারা হলেন- মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৬টি বিশ্বকাপের মধ্যে ৬টি বিশ্বকাপে খেলেছেন মোট ৩১ জন ক্রিকেটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে খেলেছেন পাঁচজন। এখন ৭টির মধ্যে ৭টিই খেলতে যাচ্ছেন তিন টাইগার ক্রিকেটার, যা তাদের জন্য অনন্য এক কীর্তি। বিশ্বকাপের দলে জায়গা পেতে হলে স্বাভাবিকভাবেই ভালো ও টানা পারফরম্যান্স করতে হয়। কারণ বিশ্বকাপের জন্য একটু যাচাই-বাছাই করেই খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ এগিয়ে আছেন। তাই তো সবগুলো বিশ্বকাপেই খেলার অনন্য কীর্তির মালিক হতে যাচ্ছেন তারা। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ দলে এসেছে অনেক ক্রিকেটার। তারা বিশ্বকাপেও খেলেছেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে টানা বিশ্বকাপ খেলার মতো এমন কীর্তি নেই কারো।
সাকিব আল হাসান : বিশ্বসেরা ও দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত হওয়া ৬টি বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলেছেন ২৫টি। এই ২৫টি ম্যাচের মধ্যে তিনি ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন ২৪টি ম্যাচে। বল করেছেন ২৫টি ম্যাচের সবগুলোতেই। ২৪ বার ব্যাট করে তিনি অপরাজিত ছিলেন মোট চারবার। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেছেন। আর সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে এই ২৪টি ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৫৬৭। তিনি বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে হাফসেঞ্চুরি করেছেন ৩টি। সেঞ্চুরি করতে পারেননি একটিও। অবশ্য নিজের পুরো টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেই এখন পর্যন্ত কোনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি। বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান রান করতে পারেননি শুধু একটি ম্যাচে। মানে তিনি মাত্র একটি ম্যাচে ডাক মেরেছিলেন।
সাকিব ২০০৭ বিশ্বকাপে ৫টি ম্যাচ খেলেন। ওই বিশ্বকাপে তিনি করেন ২৯ রান। ২০০৯ বিশ্বকাপে দুই ম্যাচ খেলে করেন ১৫ রান। ২০১০ বিশ্বকাপে ২টি ম্যাচ খেলে করেন ৭৫ রান । ২০১২ বিশ্বকাপে দুই ম্যাচ খেলে করেন ৯৫ রান। এর মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেন। ২০১৪ বিশ্বকাপে সাত ম্যাচ খেলে করেন ৩১৬ রান। সে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অপরদিকে ২০১৬ বিশ্বকাপে খেলেন ৭টি ম্যাচ। তিনি করেন ১২৯ রান। সেবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫০ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে সাকিব বেশ ভালোই সফল। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব ব্যাটিংয়ের মতো বিশ্বকাপে বোলিংয়েও উজ্জ্বল ছিলেন। তিনি ৬টি বিশ্বকাপ খেলে সব মিলিয়ে বল করেছেন ৮৮ ওভার ১ বল। তবে বিশ্বকাপে তিনি কখনো কোনো মেডেন ওভার করতে পারেননি। সব মিলিয়ে ৫৮৬ রান দিয়ে তিনি বিশ্বকাপে ৩০টি উইকেট শিকার করেছেন। তিনি ২টি ম্যাচে চার বা তার বেশি উইকেট তুলে নিয়েছেন। বিশ্বকাপে তার সেরা বোলিং ফিগার হলো ১৫ রানে ৪ উইকেট। তার ইকোনোমি রেট হলো ৬.৬৫, যা বিশ্বকাপের মতো একটি আসরে একটি বোলারের জন্য স্বস্তিদায়কই। বিশ্বকাপে সাকিব ক্যাচ ধরেছেন মোট ৭টি। বিশ্বকাপে সাকিব বাংলাদেশকে ২টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে অধিনায়ক হিসেবে ২টি ম্যাচ খেলে ২টি ম্যাচেই হারের স্বাদ পেতে হয়েছে তাকে।
মুশফিকুর রহিম : বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বড় আস্থার প্রতীক হলেন মুশফিকুর রহিম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত মোট ২৫টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এই ২৫টি ম্যাচের মধ্যে মুশফিক ২৫টি ম্যাচের সবগুলোতেই খেলেছেন। তবে তিনি ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন ২২টি ম্যাচে। আর বিশ্বকাপে এ ম্যাচগুলো খেলে তিনি রান করেছেন ২৫৮। যে ২২টি ম্যাচে তিনি ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন তার মধ্যে ৪টি ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন। বিশ্বকাপে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন পযন্ত কোনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি। এমনকি কোনো হাফসেঞ্চুরিও করতে পারেননি। এক ম্যাচে তার সর্বোচ্চ রান হলো ৪৭। মুশফিক ২০টি ম্যাচে ব্যাট করে ২টি ম্যাচে ডাক মারেন। মানে ২টি ম্যাচে তিনি কোনো রান করতে পারেননি। মুশফিক যেহেতু একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ফলে বিশ্বকাপে বা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি কখনো বল করেননি। মুশফিক যেহেতু উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলেছেন। ফলে তিনি বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে ১০টি ক্যাচ ধরেছেন। স্ট্যাম্পিং করেছেন নয়বার। বিশ্বকাপে মুশফিক বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৯টি ম্যাচে। এর মধ্যে তিনি জয় পেয়েছেন ২টি ম্যাচে। আর হেরেছেন বাকি ৭টি ম্যাচে।
মুশফিক ২০০৭ বিশ্বকাপে ৫টি ম্যাচ খেলেন। রান করেন ১৪। ২০০৯ বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে ১৫। ২০১০ বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে ২৮। ২০১২ বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে ২৯। ২০১৪ বিশ্বকাপে সাত ম্যাচে করেন ১১৮ রান। সেবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন। ২০১৬ বিশ্বকাপেও সমান ৭টি ম্যাচ খেলেন। এর মধ্যে ২টি ম্যাচে রান করতে পারেননি। আর ২টি ম্যাচ ব্যাট করতে নামতে পারেনি। সব মিলিয়ে তিনি ওই বিশ্বকাপে ৪৪ রান করেন।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরেক আস্থার প্রতীক হলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশ যখন বিপদে পড়েছেন তখনই দলের হাল ধরে তিনি অনেক ম্যাচে টাইগারদের জিতিয়ে এনেছেন। ফলে তার ওপর সব সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের একটি আস্থা ছিল। আর এ কারণে অভিষেকের পর থেকেই বাংলাদেশের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন তিনি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ২৫টি ম্যাচ খেললেও মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ২২টি ম্যাচে। এর মধ্যে তিনি ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন ১৮টি ম্যাচে। এই ১৮টি ম্যাচে ব্যাট করে তিনি রান করেছেন ১৯৪। এই পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট খুব বেশি জ্বলে ওঠেনি। বিশ্বকাপে তিনি এখনো কোনো সেঞ্চুরি বা হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি তিনি। বিশ্বকাপে এক ইনিংসে তিনি সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেছেন। তিনি যে ১৮টি ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন তার মধ্যে ২টি ম্যাচে কোনো রান করতে পারেননি।
মাহমুদউল্লাহ ২০০৭ বিশ্বকাপে ২টি ম্যাচ খেলে করেন ১৭ রান। ২০০৯ বিশ্বকাপে ২টি ম্যাচ খেলে করেন ১৫ রান। ২০১০ বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে মাত্র দুই রান। ২০১২ বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে করেন ১৫ রান। ২০১৪ বিশ্বকাপে ৭টি ম্যাচ খেলেন। কিন্তু ২টি ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। সব মিলিয়ে সে বিশ্বকাপে তিনি ৫৯ রান করেন। সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন ভারতের বিপক্ষে। ২০১৬ বিশ্বকাপে খেলেন ৬টি ম্যাচ। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেন। সে বিশ্বকাপে তিনি করেন ৭৬ রান।
অপরদিকে ২২টি ম্যাচ খেলে তিনি ৩৭ ওভার করেছেন। এর মধ্যে তিনি একটি ওভার মেডেন করেছেন। ২২ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ উইকেট পেয়েছেন ৮টি। সব মিলিয়ে ২৫৬ রান দিয়ে এই ৮টি উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এই ইনিংসে ১৩ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট তুলে নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি ক্যাচ ধরেছেন ৮টি।
ADVERTISEMENT (rafiqul)
Advertisement (madimart)
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments