২৩ অক্টোবর গণঅবস্থান-অনশন
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের নেপথ্যে একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মা এবং সরকারি দলের অভ্যন্তরে থাকা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে দায়ী করেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর, মানবাধিকার নেতা দিয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।
দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে ২৩ অক্টোবর ভোর ছয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সংগঠনটি। ঢাকায় শাহবাগ চত্বরে এবং চট্টগ্রামে আন্দরকিল্লায় এই কর্মসূচি পালন করা হবে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে আগামী ফেব্রুয়ারি সারাদেশ থেকে রোডমার্চ করে ঢাকায় সমাবেশ এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবিনামা পেশ করার সিদ্ধান্ত হয়।
শনিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। এ সময় ঐক্য পরিষদের নেতাদের মধ্যে অধ্যাপক রণজিৎ কুমার দে, জীনবোধি ভিক্ষু, তাপস হোড়, শ্যামল পালিত, নিতাইপ্রসাদ ঘোষ, মিটুল দাশগুপ্ত, রুবেল পাল উপস্থিত ছিলেন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্ত প্রতিরোধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, করোনা অতিমারি পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আসায় এবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিল। আমরা ভেবেছিলাম, এবারের দুর্গাপূজা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সম্মিলনের উৎসবে পরিণত হবে। কিন্তু সব আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে মহাষ্টমীর দিনে ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার নানুয়ার দিঘীর উত্তরপাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপ ও চানমনি কালীবাড়ির বিগ্রহ ও ফটক অগ্নিসংযোগ করে ভস্মীভূত করা এবং ১৭টি তোরণ ভেঙে দেয়ার মধ্য দিয়ে। ধর্ম অবমাননার মিথ্যা জিগির তুলে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা শুরু হয়। তা একনাগাড়ে চলে ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিন পর্যন্ত।
লিখিত বক্তব্যে কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ল²ীপুর, গাজীপুর, কুড়িগ্রাম, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ভোলা, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামে শতাধিক পূজামণ্ডপ, বাড়িঘর, হিন্দুদের মালিকানাধীন দোকানপাটে হামলা ও ভাঙচুরের তথ্য তুলে ধরা হয়। নোয়াখালীর চৌমুহনীতে দুইজন এবং চাঁদপুরে একজন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত এবং শ’খানেক লোক আহত হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
লিখিত বলা হয়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল ও নাপোড়া গ্রামে হামলায় নেতৃত্ব দেন স্থানীয় মোহাম্মদ সাবের আহমেদ, মোহাম্মদ রিদোয়ান, মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম। তবে বাঁশখালীতে হামলা প্রতিরোধে স্থানীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান ও চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মহানবমীর দিন ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা জেলেপাড়া পূজামণ্ডপে স্থানীয় ‘জয় বাংলা ক্লাব’ থেকে হামলা চালানো হয়। এতে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় ইলিয়াস মেম্বার, সম্প্রতি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া জয়নাল ও মনির।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, এই হামলায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে সহযোগিতাকারী, একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মারা জড়িত। একইসঙ্গে সরকারি দলের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী মুজিব কোট গায়ে দিয়ে এই হামলায় অংশ নিয়েছে।
২০১১ সাল থেকে পরিকল্পিতভাবে পর্যায়ক্রমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আজ আর উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। এর সবটাই পরিকল্পিত। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, একদিকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিসরে বিনষ্ট করা, অন্যদিকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় অগ্রসরমান উন্নতিকে ব্যাহত করা। তদুপরি বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে বিতাড়ন করে গোটা দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করা।’
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণার বাস্তবায়ন চাই। সংখ্যালঘু হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আমাদের প্রথম ও প্রধান পরিচয় হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। এরপর হচ্ছে আমরা কে কোনো ধর্ম পালন করি। দুঃখজনক হচ্ছে, গত ১০ বছরে রামু থেকে নাসিরনগর, সুনামগঞ্জ- একটি ঘটনারও বিচার পেলাম না। কারো শাস্তি হলো না। এতে সরকারের ভেতরে-বাইরে থাকা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী উৎসাহিত হচ্ছে।
Advertisement (madimart)
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments