অস্ত্রের মহড়ায় বাড়ছে আতঙ্ক
তৃতীয় দফা আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুন্সিগঞ্জের চরাঞ্চলে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরোধের জেরে প্রতিদিনই গ্রামে গ্রামে চলছে ককটেল বিস্ফোরণ, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো ঘটনা। এতে হামলার আতঙ্ক আর উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে গ্রামবাসীর। হামলার ভয়ে গ্রামের অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
গত বুধবার উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, পুরো ইউনিয়নজুড়ে বহিরাগতদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে চলছে মহড়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গ্রামে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও প্রতিদিনই ঘটছে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা।
স্থানীয়রা বলছেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নটির দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গত ১৪ নভেম্বর সকাল থেকে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, দুই পক্ষের সংঘর্ষে, দফায় দফায় কয়েক শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ গ্রামে গ্রামে চালানো হয় লুটপাটের ঘটনা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকেরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে কথা-কাটাকাটির জেরে বেধে যায় সংঘর্ষ। এ সময় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলায় জড়িয়ে পড়ে দুই গ্রুপের সমর্থকেরা। এরপর থেকে পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। হামলার আতঙ্কে বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
ইউনিয়নের মহেশপুর এলাকার স্থানীয় নারী বাসিন্দা আকলিমা সুলতানা বলেন, ‘আমার স্বামী প্রবাসী। আমি আমার কোলে ৬ মাসের শিশুসন্তান নিয়ে এই গ্রামে বসবাস করি। এ কেমন নির্বাচন, আমাদের মতো নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে লুটপাট চালাচ্ছে।’
গ্রামে গ্রামে চলছে ককটেল বিস্ফোরণ, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো ঘটনা। অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে চলছে মহড়া। গ্রামে গ্রামে চলছে ককটেল বিস্ফোরণ, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো ঘটনা। অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে চলছে মহড়া।
হামলার ভয়ে বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে পালিয়ে বেড়ানো ঢালীকান্দি গ্রামের আরেক বাসিন্দা সফিক দেওয়ান বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ। কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না, তবু কেন বারবার আমরা পরিবারসহ হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছি। আমাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি রেখে গ্রামছাড়া করে দেওয়া হচ্ছে, এতে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী রিপন পাটোয়ারী ও আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মহাসিনা হক কল্পনার সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে দীর্ঘদিন। এতে নির্বাচনের আগেই এলাকাজুড়ে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন ভোটাররা। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
নোয়াদ্দা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ইউনিয়নে টানা তিন দিন যে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে, এতে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমরা শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। তাই ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারব কি না, এটাই এখন প্রশ্ন প্রশাসনের কাছে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী মহসিনা হক কল্পনা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা আমাকে শুরু থেকেই নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় বাধা, পোস্টার ছেঁড়াসহ কর্মীদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমার সমর্থকেরাও তার পাল্টা জবাব দিচ্ছে।’
অপর আওয়ামী লীগের প্রার্থী রিপন হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে শুরু থেকে মহসিনা হক কল্পনা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা নিজেরাই একের পর এক হামলা করে আমার কর্মী-সমর্থকের ওপর চাপাচ্ছে। আমি এসব সহিংসতা বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
সদর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক, চরাঞ্চলের সহিংসতায় এ পর্যন্ত দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা সম্ভব হলেও কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না এমন সহিংসতা।’
Advertisement (madimart)
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments