আচরণবিধি ভেঙে প্রচারে এমপিরা
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও গোলযোগের মধ্যে মাঠ কর্মকর্তাদের ‘তৎপরতা’ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনার। গতকাল সকালে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত বিভাগীয় কমিশনারদের বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সূত্র জানিয়েছে, ইউপি নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার-প্রচারণা চালানোর বিষয়টি বৈঠকে আলোচনায় আসে। এ ছাড়া নির্বাচনী সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনাগুলো নিয়ে তদন্তের ওপর গুরুত্ব দেন একজন নির্বাচন কমিশনার।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম, ৮টি বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এবং ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, বিভিন্ন দেশেই নির্বাচনের সময় সহিংসতা হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও এটা হয়। সব ঘটনা নির্বাচনের কারণে ঘটছে না। ব্যক্তিগত রেষারেষি, পূর্ব শত্রুতার জেরেও ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এর মধ্যে থেকেই একটি ভালো নির্বাচনের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। জানা গেছে, বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এমপিরা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে দেখা যাওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। একাধিক বিভাগীয় কমিশনার এই প্রেক্ষাপটে বলেছেন, এমপিদের এমন ঘটনা নজরে আসার পর তাদের বলা হয়েছে, সতর্ক করা হয়েছে। এরপর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়নি। সূত্র জানায়, বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনাররা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার শপথ নিয়েছেন। আর কর্মকর্তারা এই শপথের সহযোগী। তারাই মূলত নির্বাচন পরিচালনা করেন। তিনি আশঙ্কা করেন, সামনের ধাপের ভোটে সহিংসতা আরও বেড়ে যেতে পারে। তিনি মৃত্যুর ঘটনাগুলো নিয়ে তদন্তের ওপর গুরুত্ব দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আগামী নির্বাচন ঘিরে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা সংঘাতমুক্ত করতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তারা মনে করছেন, ভোটে সংঘাত আগের তুলনায় কমিয়ে আনতে পারবেন। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনাররা বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সহিংসতা কমাতে মাঠ পর্যায়ে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে না। কিছু কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। তবে এখন পর্যন্ত ভালো নির্বাচন হয়েছে। সামনে তারা আরও ভালো নির্বাচন করতে চান, সহিংসতাও আরও কমে আসবে বলে তারা আশাবাদী। ইতিমধ্যে ইউপি নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপের ভোট শেষ হয়েছে। আগামী ২৯ নভেম্বর তৃতীয় ও ২৩ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপের ভোট রয়েছে। শিগগির আরেক ধাপের তফসিল দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নের মধ্যে এ পর্যন্ত ১২০০ ইউপির ভোট হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের সংঘাতে এরই মধ্যে প্রাণ গেছে অন্তত ৪৬ জন মানুষের। বৈঠকের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পরের ধাপের নির্বাচনগুলোতে কর্মকর্তারা যেন আরও ভাইব্রেন্ট হন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের যেন কড়া নজরদারি থাকে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়গুলোও তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। ইসির উদ্যোগগুলো তুলে ধরে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগে ইতিমধ্যে এক জায়গায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আরেকটি নির্বাচনী এলাকায় একজন এমপি অবস্থান করায় তাকে দ্রুত এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য জরিমানাও করা হচ্ছে। ফৌজদারি অপরাধগুলোর বিষয়ে স্থানীয়ভাবে মামলা হচ্ছে। বিভাগীয় কমিশনাররা ঢাকায় এসেছিলেন প্রশাসনের এক বৈঠকে যোগ দিতে। সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার তাদের ওই সভা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে শুক্রবার তাদের ইসিতে ডাকা হয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সব বিভাগে এ সময়ে যেতে পারব না। তাই চাইলাম যে কথাগুলো আমরা বলে আসছি, সেগুলো তাদের সঙ্গে বসে সামনাসামনি বলি। তাই এ বৈঠক। ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে এ বৈঠকে তিন নির্বাচন কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে নির্বাচন ‘সুষ্ঠু ও সুন্দর’ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
Advertisement (madimart)
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments