নায়িকা শিমুকে হত্যা লৌহমষর্ক কাহিনী
বড় মেয়ে অজিহা আলিম রিদ বাসা থেকে বের হওয়ার পর চলচ্চিত্র নায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুকে হত্যা করা হয়। মেয়ে বাসায় ফেরার আগেই বন্ধুকে ডেকে লাশ বস্তায় ভরে বাসা থেকে বের হন তার স্বামী খন্দকার সাখাওয়াত আলীম নোবেল। বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীকে নাস্তা আনার কথা বলে বাইরে পাঠান। এই ফাঁকে দুজন মিলে বাড়ির গ্যারেজে আগে থেকেই রাখা গাড়ির পেছনের সিটে বস্তাবন্দি লাশ তোলেন। বড় মেয়ে ও নিরাপত্তারক্ষী বাড়ি ফেরার আগেই গাড়িতে করে লাশ নিয়ে বের হন। লাশ গুম করতে তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকেন। তবে সকালে কর্মচঞ্চল ঢাকায় সে সুযোগ না পেয়ে তারা বাসায় চলে আসেন। এরপর আবার যান কেরানীগঞ্জ। সেখানে লাশ ফেলে ঢাকায় ফিরে গাড়ি ধুয়ে ফেলেন।
অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, রবিবার (১৬ জানুয়ারি) শিমুর বড় মেয়ে অজিহা আলিম রিদ বাসা থেকে বের হওয়ার পর তাদের বেড রুমেই এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে শ্বাসরোধ করে শিমুকে হত্যা করা হয়। এরপর কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না নোবেল। বেড রুমেই স্ত্রীর লাশের পাশে বসেই বাল্যবন্ধুকে ফোন দেন নোবেল। এসময় তাদের পাঁচ বছর বয়সী ছেলে রায়হান বাসার অন্য কক্ষে ছিল। তবে তখনও সে ঘুম থেকে ওঠেনি। নোবেলের বন্ধু এস এম আব্দুল্লাহ ফরহাদ আসার পর লাশ বস্তায় ভরে নিচে নামানো হয়। রিদ আসার আগেই সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে গাড়ির ব্যাক ডালায় রাইমার লাশ রেখে নিয়ে তারা বাসা থেকে বের হন। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করেন। লাশ কোথাও ফেলার সুযোগ না পেয়ে মোহাম্মদপুর দিয়ে কেরানীগঞ্জের দিকে চলে যান। কেরানীগঞ্জের হযরতপুর গিয়ে তারা সুযোগ বুঝে লাশ ফেলে পালিয়ে বাসায় আসেন। ফাঁকে তারা গাড়ি ধুয়ে মুছে ফেলেন।
বাসায় ফিরে নোবেল নিজেও স্ত্রীকে খোঁজার ভান করেন। শিমুর ছোটভাই সাইদুল ইসলাম খোকন, বোন ফাতিমা নিশার সঙ্গে নোবেলও বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রীকে খোঁজেন। নিজেই ওইদিন রাতে গিয়ে কলাবাগান থানায় নিখোঁজের জিডি করেন। ১৭ জানুয়ারি সকালে এই নায়িকার মরদেহ মেলে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ব্রিজের কাছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, কেরানীগঞ্জে লাশটি উদ্ধারের পর তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তার পরিচয় বের করা হয়। এরপর পুলিশ তার গ্রিন রোডের বাসায় আসে। বাসার সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পাশাপাশি বাসায় তল্লাশি করে। শিমুর স্বামীর গাড়িও তল্লাশি করা হয়। লাশ গুম করতে দুটো বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতারই হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়। গাড়িটি ধোয়া ছিল, দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোবেলকে আটক করে পুলিশ। এরপর সে হত্যার কথা স্বীকার করে।’
নিহত শিমুর ভাই শহিদুল ইসলাম খোকন বলেন, তাদের মধ্যে তেমন কোনও কলহ ছিল না। ১৮ বছরের সংসার, তারা লাভ ম্যারেজ করেছিল। তারপরও কেন এই হত্যা বুঝতে পারছি না।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার জানান, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় ও দাম্পত্য কলহের জেরে শিমুকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিত্রনায়িকা শিমুর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু এস এম আব্দুল্লাহ ফরহাদকে রাতেই কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নিয়ে আসা হয়।
শিমুর গ্রামের বাড়ি বরগুনার তালতলি উপজেলায়। তারা ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় থাকেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জানুয়ারি নিখোঁজ হন শিমু। এই ঘটনায় কলাবাগান থানায় একটি জিডি করেন তার স্বামী। ১৭ জানুয়ারি সকালে কেরানীগঞ্জে একটি সড়কের পাশের শিমুর বস্তাবন্দি খণ্ডিত লাশ পায় পুলিশ।
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments