সবার নজর এখন ৩২২ জনে
সার্চ কমিটির হাতে থাকা ৩২২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের নামের তালিকার দিকে তাকিয়ে আছে গোটা দেশ। এই ৩২২ জনের মধ্যে কোন ১০ জনের নাম যাবে বঙ্গভবনে, এ নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। কারণ ওই ১০ জনের তালিকা থেকেই পাঁচজনকে বেছে নেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ; যাদের হাতে ন্যস্ত করা হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুদায়িত্ব। তাদের সুষ্ঠু ও সুচারু দায়িত্ব পালনের জন্য ওপর নির্ভর করবে দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার পদে সার্চ কমিটিতে (অনুসন্ধান কমিটি) প্রস্তাবিত ৩২২ জনের নামের তালিকায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সাবেক বিচারপতি, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্বসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি নাম সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবের। শিক্ষাবিদ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে এসেছে ৫০-এর অধিক, প্রায় ৭০টির মতো নাম জমা পড়েছে সাবেক বিচারপতি, জেলা জজ ও আইনজীবীদের মধ্য থেকে। এর
বাইরে অর্থনীতিবিদ, কৃষিবিদ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাহিত্যিক, অবসরপ্রাপ্ত সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নামসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তির নাম আছে তালিকায়। তবে কারা কাদের নাম প্রস্তাব করেছেন তা প্রকাশ করা হয়নি। ২৪ রাজনৈতিক দল ও ৬টি পেশাজীবী সংগঠনের দেয়া এ নামের তালিকা থেকে যোগ্য ১০ জনকে বেছে নিতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে সার্চ কমিটি। সুশীল সমাজ, পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত নেয়া হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ জমা দেয়ার আগেও যদি কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নাম প্রস্তাব করে, তাহলে সেগুলো বিবেচনায় নেবে সার্চ কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে চারজন সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠকে সার্চ কমিটির সদস্যরা এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। কমিটি আরো জানায়, এরই মধ্যে ৩২২ জনের তালিকা বাছাই করে আরো অনেক ছোট করা হয়েছে। শিগগিরই তা রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে ইসি গঠনে সার্চ কমিটির তালিকায় যাদের নাম এসেছে, তারা প্রত্যেকেই দক্ষ ও যোগ্য বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির মতে, এরা প্রত্যেকেই নিজ কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এছাড়া দেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাছাড়া নির্বাচন পরিচালনার কাজে সরকার কখনোই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর প্রভাব বিস্তার করেনি, করবেও না বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা সবাই জানি, নির্বাচন অনুষ্ঠান ইসির কাজ। ইসি দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের মধ্য থেকেই নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে। নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসির অধীনে থাকে। কোনো দল বা সরকার নির্বাচন পরিচালনা করে না। নির্বাচনকালীন সরকার শুধু তাদের রুটিন ওয়ার্ক করে থাকে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি নাম জমা না দিলেও সার্চ কমিটিতে যে নাম এসেছে, তাতে ভালো নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন সম্ভব হবে। আমরা আশা করি, সার্চ কমিটি এমন যোগ্য ব্যক্তিদের নাম জমা দেবে, যেখান থেকে আমরা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন পাব। যে কমিশন জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন পরিচালনা করবে, যা বিশ্বে প্রশংসিত হবে। কারণ সরকার চায় দেশে-বিদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
এদিকে ইসিকে ক্ষমতা না দিলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না বলে মনে করছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। দলটির মতে, বর্তমান ইসি গঠন আইন পুরনো ব্যবস্থার নতুন সংস্করণ মাত্র। জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে তালগাছটা যেন আমার না হয়। আমরা ইসিকে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন কমিশন আইন চেয়েছিলাম। কিন্তু ইসি গঠনে যে আইনটি হয়েছে তা নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস। দেশের মানুষ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়।
অন্যদিকে সার্চ কমিটি, নির্বাচন কমিশন সব এক ধাক্কায় চলে যাবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ২০১৪ আর ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন আর হবে না, জনগণই তা প্রতিহত করবে। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসে তারাই এই আন্দোলনে থাকবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ ফ্রেব্রুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন- ২০২২’ অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি পদের জন্য দুটি করে মোট ১০টি নাম সুপারিশ করবে। এরপর রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার কমিশনারের নাম চূড়ান্ত করবেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হয়েছে
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments