১৫ লাখ টাকায় টিপু কিলিং মিশন, মুসাকে দায়িত্ব দেন ওমর
টিপুর সহকর্মী রিজভী হাসান বাবু ওরফে ‘বোচা বাবু’ হত্যার সাথে জড়িতরাই টিপুকে হত্যা করেছে। মূলত বাবু হত্যা মামলা থেকে বাঁচতেই টিপুকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ওমর ফারুকসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব দাবি করেছে, টিপু হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনা হয় দুবাইয়ে। সেখান থেকেই বাস্তবায়ন করা হয়।
১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে দুবাইয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে যার বাস্তবায়ন করে আরেক সন্ত্রাসী মূসা। র্যাব বলছে, পলাতক মূসাকে গ্রেপ্তার করা গেলে এই হত্যার আরও তথ্য জানা যাবে।
২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলতে নিহত হন সেই সময়ে ঢাকা দক্ষিণ মহানগরের যুবলীগ কর্মী রিজভি হাসান বাবু ওরফে বোচা বাবু।
বোচা বাবু হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তর হলে নড়ে চড়ে বসে মামলার মূল অভিযুক্তরা। কিন্তু তাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান আওয়ামী লীগ নেতা টিপু।
বাবু হত্যা থেকে বাঁচতে জড়িতরা নানা উদ্যোগ নিলেও, একের পর এক সেসব ভেস্তে দিচ্ছিলেন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগ নেতা টিপু।
প্রায় তিন মাস আগে আদালত চত্বরে বনেই তাই টিপুকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন ওমর ফারুক। তিনি মতিঝিল দশ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
গ্রেপ্তার হওয়া বাকি তিন জন হলেন- আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ। নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির। মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্যা পলাশ।
তারা সবাই মূল হত্যাকারি আকাশের আশেপাশে অবস্থান নিয়েছিলো। হত্যাকান্ডের পর তারা নিজেদের মধ্যে এসএমএস দিয়ে জানায়- ‘ইট ইজ ডান’।
টিপু হত্যার মূল পরিকল্পনা করে ওমর ফারুক। আর হত্যাকারিদের নিয়োগ করাসহ পুরো ঘটনার সমন্বয় করে পলাতক মুসা।
র্যাব বলছে, টিপু হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে গেলো ১২ মার্চ দুবাই যায় মুসা। ধারণা করা হচ্ছে দুবাইয়ে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা নিতেই তার দুবাই যাওয়া।
রাজধানীর কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে শনিবার র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, দুবাইতে বসেই টিপু হত্যার ছক কষে মুসা।
তিনি জানান, তালিকাভুক্ত শীর্ষসন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশের সহযোগী হিসেবে পরিচিত কিলার মুসা ঢাকার আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়ার্ল্ডের একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী।
বোচাবাবু হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে আল-মঈন বলেন, স্বার্থের বিভিন্ন দ্বন্দ্বের কারণে কিলার মুসার মাধ্যমেই আন্ডারগ্রাউন্ডের সন্ত্রাসীদের সহায়তায় বোচা বাবুকে হত্যা করা হয়েছিল।
বোচা বাবু ছিলেন টিপুর সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিল। সে কারণেই টিপু নিহত বাবুর বাবা এবং সেই হত্যা মামলার সাক্ষী কালামকে সহায়তা করে আসছিলেন।
মামলার সব সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ। আসামিদের মনে ভয় ছিল, মামলা যদি দ্রুত গতিতে চলে তাহলে তাদের ফাঁসির রায় হয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
নাসির ও ওমর ফারুক টিপুকে হত্যা করার জন্য কিলার মুসাকে দায়িত্ব দেয়। এছাড়া কাইল্লা পলাশের মাধ্যমে বিদেশে আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসীও টিপুকে হত্যার বিষয়টি জানায়।
পরে, তারা এ হত্যার জন্য ১৫ লাখ টাকা বাজেট দেয়। যেখানে কিলিং মিশনে দায়িত্ব পরে মুসার ওপর। সমন্বয়কারী হিসেবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে শুটার ঠিক করে সে।
এই হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন আগে, ১২ মার্চ বাংলাদেশ থেকে গোপনে দুবাই চলে যায় কিলার মুসা। সেখানে বসেই হত্যার ছক সাজায়।
কিলার মুসা নিজেও বোচা বাবু হত্যা মামলার আসামি। সেই মামলার হাজিরা থেকে বাঁচতে করোনার সনদ উপস্থাপন করে সে।
দুবাই যাবার পরে মুসা আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে শুটার নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। নাসির, ওমর ও পলাশের কাছ থেকে সব আপডেট নিয়েছে মুসা।
হত্যাকাণ্ডে চুক্তি করা ১৫ লাখ টাকার মধ্যে ৯ লাখ টাকা ওমর ফারুক দিয়েছে। বাকি ৬ লাখ টাকা মুসা নাসিরের কাছ থেকে নিয়েছে।
মুসা বিদেশ যাওয়ার সময় ৫ লাখ টাকা সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। পরে তার কাছে আরও চার লাখ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হয়।
র্যাব বলছে, টিপু হত্যার সমন্বয়কারী সুমন শিকদার ওরফে মুসাকে দুবাই থেকে ফেরাতে কাজ শুরু হয়েছে। এখন মুসা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দুবাইয়ের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পাঠানো হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে যথাযথভাবে দুবাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে। পাশাপাশি হত্যায় জড়িত শামীম ওরফে মোল্লা শামীমকেও খোঁজা হচ্ছে।
হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম এসেছে। এর মধ্যে বিকাশ, প্রকাশ, মানিক ও মোল্লা মাসুদের নাম বেশি শোনা গেছে।
খন্দকার আল মঈন জানান, এ ঘটনায় আন্ডারগ্রাউন্ডের কিছু লোক জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছি। বিদেশ থেকে টিপুকে হুমকি দেয়া হয়েছিল। এর প্রমাণও পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তার কিলার নাছির এই হত্যাকাণ্ড সংঘঠনের সময় টিপুকে নজরদারি ও হত্যাকাণ্ডের জন্য অর্থ দিয়েছে। ঘটনাস্থলের কাছে তাকে সাদা শার্ট, জিন্স প্যান্ট ও কেডস পরা অবস্থায় দেখা যায়।
ঘটনার পর সে তার মোবাইল ফ্লাশ করে বিক্রি করে দেয় ও সীমকার্ড ভেঙ্গে ফেলে। র্যাব ওই ফোন ও সীমকার্ড উদ্ধার করে।
এছাড়া ঘটনার আগেরদিন নাছির চৌদ্দগ্রামে একদিন অবস্থান করেছিল। কিলার নাছির বোচা বাবু হত্যা মামলার এক নম্বর চার্জশীটভূক্ত আসামি।
গ্রেপ্তার কাইল্লা পলাশ ঘটনার দিন টিপুকে নজরদারি ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে দেয়ার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে।
আর গ্রেপ্তার শুটার সালেহ ঘটনার পরিকল্পনা ও অর্থ প্রদানের সঙ্গে জড়িত। সে রিজভী হাসান বাবু ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের দুই নম্বর চার্জশীটভুক্ত আসামী।
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments