রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়া সেই তিন যাত্রীর পরিচয় সনাক্ত
গত ৫ মে রাতে ঈশ্বরদী রেল জংশন থেকে টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠেন ‘রেলমন্ত্রীর আত্মীয়’ পরিচয়দানকারী তিন যাত্রী। টিকিট না কাটলেও তারা রেলের এসি কেবিনের সিট দখল করেন। এতে রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) তাদের জরিমানা করেন। পরে ‘রেলমন্ত্রীর আত্মীয়’ পরিচয়দানকারী ওই তিন যাত্রী তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয় বলে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে অভিযোগ করেন। এতে টিটিই শফিকুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার রাতেই সাময়িক বরখাস্ত করে রেল কর্তৃপক্ষ। সাময়িক বরখাস্তের আদেশ শুক্রবার (৬ মে) থেকে কার্যকর হয়েছে। পাশাপাশি কারণ দর্শানোরও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল ৭ মে রেলমন্ত্রী সেই তিনজন যাত্রী তার আত্মীয় নয় বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয় দেওয়া সেই তিন যাত্রীর পরিচয় সনাক্ত করা গেছে। তারা রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের নিকটাত্মীয়। ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া ব্যক্তি মো. ইমরুল কায়েস। তিনি রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের মামাতো বোন ইয়াসমিন আক্তার নিপার ছেলে। তারা ঈশ্বরদীর নূরমহল্লায় বসবাস করেন।
ইমরুল কায়েস নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত। তার ট্রেনযাত্রার সঙ্গী হাসান ও ওমর রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মীর মামাতো ভাই। হাসানের বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। হাসান রাজশাহীতে একটি কলেজে এইচএসসিতে পড়াশোনা করেন। ওমরের বাবার নাম আব্দুর রহমান। ওমর পাবনা শহরে একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেন। হাসান ও ওমর ইয়াসমিন আক্তার নিপার চাচাতো ভাই।
ঘটনার রাতে রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের সঙ্গেই ছিলেন ইয়াসমিন আক্তার। তার ভাষ্যমতে, ছেলে ইমরুল কায়েস ফোন দিয়ে ট্রেনে ঝামেলার কথা জানালে রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তার রেলওয়ের একজন কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করতে বলেন।
ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘৫ মে রাতে তার ছেলে ইমরুল টিকিট না পাওয়ায় নুরুল আলম নামের রেলওয়ের এক সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (এসিও) ফোন দেন শাম্মী আক্তার। রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর পরিচয় পেয়ে স্টেশনমাস্টার টিকিট করতে হবে না বলে জানান। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনার আত্মীয়ের টিকিট করতে হবে না।’ সে কারণেই ইমরুল কায়েস টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠেন। পরে তাদের সম্মান দেখিয়ে এসি কেবিনে বসানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেন ছাড়লে টিটিই এসে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করেন। তিনি আমার ছেলেকে ‘ট্রেন কি তোর বাপের’ বলে গালি দেন। রাত ৩টার দিকে ছেলে ফোন দিয়ে এসব জানালে শাম্মী টিটিইর ফোন নম্বর চায়। কিন্তু ফোন নম্বর না দিয়ে চলে যায়। পরিচয় পাওয়ার পরও টিটিইর এমন আচরণে শাম্মী রেগে গিয়ে রেলের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (ডিটিও) ফোন দিয়ে বরখাস্ত করতে বলেন। পরে তিনি টিটিইকে বরখাস্ত করেন।
ইমরুল কায়েস প্রান্তর দাবি, তিনি সুন্দরবন ট্রেনে তাড়াহুড়ো করে উঠেছিলেন। এজন্য টিকিট কাটতে পারেননি। পরে টিটিই শফিকুল ইসলাম তার কাছে বেশি টাকা দাবি করেন। সেটা না দেওয়ায় গালিগালাজ করেন। টিটিই শফিকুল ইসলাম মাদকাসক্ত বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ ঘটনা তদন্তে শনিবার (৭ মে) সকালে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম (মহাব্যবস্থাপক) অসীম কুমার তালুকদার জানিয়েছেন, ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে এবং জনমনে নানা প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। এজন্য প্রকৃত ঘটনাটি উদঘাটনের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments