বিমানবন্দর দ্রুত চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন আলহাজ্জ্ব নূরুজ্জামান বিশ্বাস, এমপি ।

বিপুল অধিকারী, যোগাযোগের প্রয়োজনেই স্থাপন হচ্ছে নতুন বিমান বন্দর কারণ উন্নয়নের পূর্বশর্ত আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা। এক্ষেত্রে অগ্রগামী বিমান যোগাযোগ। কিন্তু বিমান বন্দর থেকেও নেই ঈশ্বরদীতে। প্রতিশ্রæতির পর প্রতিশ্রæতি থাকলেও আজও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের অভাবে এখনও বন্ধ হয়ে আছে ঈশ্বরদীর বিমানবন্দরটি। বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর সংস্কার ও পুনরায় চালুর পরিকল্পনা করছে বলে গত বছরের ২৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জানিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন এবং ২০২০ সালে পুনঃনির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বিমানবন্দর চালুর বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও দীর্ঘদিন সরকার এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পুনঃনির্বাচনে এই আসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ্ব নূরুজ্জামান বিশ্বাস এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি জাতীয় সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে তদবির শুরু করেন। এরই প্রেক্ষিতে ১৫ অক্টোবর বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সরেজমিনে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর পরিদর্শনও করেন। বাংলাদেশ সরকারের কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও বাংলাদেশ আওযামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ঈশ্বরদীতে অনুষ্ঠিত লিচু মেলায় ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটির গুরুত্ব তুলে ধরে চালুর উদ্যোগের কথা বলেন বক্তৃতায়। গত ১৫ আগস্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ওয়াফেস ওসমান সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালুর বিষয়টি এখন সময়ের দাবি।

তবুও দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত বিমানবন্দরটি এখনও স্বপ্নই রয়ে গেছে। ২০১৪ সালে সর্বশেষ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ফ্লাইট নেমেছিল ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে। এরপর আর কোনো যাত্রীবাহী ফ্লাইট এখানে অবতরণ করেনি। দেশের সব বেসরকারি এয়ারলাইন্স কোম্পানি, পাবনা জেলা প্রশাসক ও ঈশ্বরদীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরও চালু করা হয়নি বিমানবন্দরটি। বিমানবন্দরটি দ্রুত চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ্ব নূরুজ্জামান বিশ্বাস । উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাচীনতম এই বিমানবন্দর ১৯৪০-১৯৪৫ সালের মাঝা মাঝি সময়ে স্থাপিত হয়। ১৯৬০ সালে ৪১২ একর জমির ওপর ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। তখন প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে রানওয়ে তৈরি করে ডাকোটা ডিসি-৩ বিমান চালু করা হয় । ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কিছুদিন পরপরই এটি স্থাপিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বিমানবন্দরটি হিজলি বেজ এলাকা নামে পরিচিত ছিল। ১৯৪৫ সালের ৮-২৪ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানবাহিনীর ২০তম বোমারুবাহিনী এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করেছিল। তথ্যসূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে প্রথম বাংলাদেশ বিমান ওঠানামা শুরু করে। সেই সময় প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে দুটি করে ফ্লাইট চলত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এ বিমানবন্দরটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মেরামত করে ১৯৭২ সালে আবার বিমান চলাচল শুরু হয়। তখন পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর ও রাজশাহীর অনেক যাত্রী ঈশ্বরদী হয়ে বিমানে ঢাকা যাতায়াত করতেন। পরে লোকসানের অজুহাতে ১৯৮৭ সালে এ রুটে ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাত্রীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালের ১৭ জুলাই থেকে বিমান চলাচল শুরু হলেও ১৯৯৬ সালের ৩ নভেম্বর পুনরায় বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়। এরপর যাত্রীদের দাবির মুখে ১৯৯৮ সালের ১০ মে বেসরকারি এয়ারলাইন্স এয়ার পারাবতের ফ্লাইট চালু হয়। মাত্র ৩৮ দিন চলার পর ২৮ জুন এই সার্ভিসও বন্ধ করা হয়। ১৭ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর আবার ফ্লাইট উদ্বোধন করা হলেও ৬ মাস পর আবার বন্ধ হয় বিমানবন্দরটি। ওইদিন বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এই বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। কিন্তু ৬ মাস ১১ দিন চালু থাকার পর ২০১৪ সালের ২৯ মে আবার বন্ধ হয়ে যায় বিমানবন্দরটি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলছে পাবনায়। বিদেশি নাগরিকসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় সেখানে। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক প্রসার ঘটেছে এরই মধ্যে। ঢাকা-চট্টগ্রাম দ্রুত যাতায়াতের জন্য বিমানবন্দরের বিমান পরিবহনের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এসব কারণে সাত বছর ধরে বন্ধ থাকা ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি অবিলম্বে খুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি চালু হলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এয়ারলাইন্স ব্যবসায়ী উভয়ে লাভবান হবে, পাশাপাশি সরকারেরও রাজস্ব আয় হবে বলে মনে করছেন তারা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বলেন, বিমানবন্দরটি চালু না থাকায় এখানে কর্মরত বিদেশি নাগরিক বিশেষ করে রাশিয়ানদের সড়কপথে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ কারণে দ্রুত বিমানবন্দরটি খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এটি চালু হলে শিল্পোদ্যোক্তারাও এখানে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাবেন। ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, প্রধানমন্ত্রী রূপপুর প্রকল্পসহ অনেক কিছু আমাদের দিয়েছেন। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। যাতায়াতের সুবিধার্থে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালুর জন্য তাঁর কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। ঈশ্বরদী নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ কিরণ বলেন, নাগরিকের যাতায়াতের সুবিধাসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের প্রসার ঘটাতে ঈশ্বরদীতে ফ্লাইট চালু রাখা সময়ের দাবি। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য শিল্পপতি জালার উদ্দীন তুহিন বলেন, ঈশ্বরদী বিমান বন্দরটি চালু হলে বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিযোগের বিষয়টি মাথায় রেখে বিমানবন্দরটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন দিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালু করা জরুরী । বিমানবন্দরসহ ঈশ্বরদী-আটঘড়িয়ার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী বিমান বন্দর চালুর বিষয়ে আমাকে নিরাশ করবেন না।

Advertisement (sandha)

A

dvertisement (pabna sweet)

Advertisement (school)