ফরিদপুরের গণসমাবেশকে ঢাকার প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে বিএনপি
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট, মামলা-হামলা, গুম, হত্যা, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। তার আগে সারাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিভাগীয় সমাবেশ। এ পর্যন্ত পাঁচ বিভাগের পর ষষ্ঠবারের গণসমাবেশ ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত হবে। এ গণসমাবেশে স্মরণকালের বড় গণজমায়েত ঘটাতে চায় ফরিদপুর বিএনপি। নেতারা জানিয়েছেন, ফরিদপুরের গণসমাবেশকে ঢাকার মহাসমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বিএনপি নেতাদের মতে, এক সময় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে সারাদেশে পরিচিত ছিল বৃহত্তর ফরিদপুর। তবে সেই পরিস্থিতি এখন নেই। ফরিদপুর-৩ (সদর) ও ২ (নগরকান্দা) ছাড়া বাকি ১৩ আসন আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে পরিচিত থাকলেও চিত্র এখন পাল্টাচ্ছে। বিশেষ করে ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় সেই আবেগে ভাটা পড়েছে। আর দলের নেতাদের মধ্যেও রয়েছে যোজন যোজন দূরত্ব।
অপরদিকে সাবেক মন্ত্রী, বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কে এম ওবায়দুর রহমান এবং ফরিদপুরের বিখ্যাত মোহন মিয়া পরিবারের উত্তরসূরি ও সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মতো কিংবদন্তিতুল্য নেতারা ফরিদপুরে বিএনপিকে শক্তিশালী ভিত্তিতে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। তাদের অবর্তমানে ঝিমিয়ে পড়ে বিএনপি। তবে সম্প্রতি এক ঝাঁক সম্ভাবনাময় নতুন নেতৃত্ব-যারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দলের যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য। এসব নতুন নেতৃত্ব শুধু ফরিদপুরের রাজনীতিতেই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও জায়গা করে নিচ্ছেন সমানভাবে। তারই ফলে বিভাগ না হলেও ফরিদপুরকে সাংগঠনিক বিভাগ ঘোষণা করেছে বিএনপি।
গণসমাবেশের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম। গণসমাবেশ সফল করতে অভ্যর্থনা উপকমিটি, ব্যবস্থাপনা উপকমিটি, মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটি, প্রচার উপকমিটি, আপ্যায়ন উপকমিটি, মিডিয়া উপকমিটি, মেডিকেল উপকমিটি ও শৃঙ্খলা উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিদিনই জেলা ও মহানগর বিএনপি ছাড়াও বিএনপি সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাড়া-মহল্লা ও হাট-ঘাটে লিফলেট বিতরণ চলছে।
গণসমাবেশ প্রস্তত কমিটির সমন্বয়ক শামা ওবায়েদ বলেন, ১২ নভেম্বরের গণসমাবেশকে ঘিরে আগেভাগেই সরকারি মহল পরিবহন ধর্মঘটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তবে পদ্মা, গড়াই, মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁ বেষ্টিত বৃহত্তর ফরিদপুরের প্রবেশপথ অসংখ্য। তাই অন্যান্য বিভাগের মতো বিএনপির সমাবেশ ঠেকানোর কৌশল এখানে ততটা কার্যকর হবে না।
তিনি বলেন, পদ্মা পেরোলেই বৃহত্তর ঢাকার মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলা। দুটিই বিএনপির দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। কাছেই রয়েছে ঢাকার দুই উপজেলা ধামরাই ও সাভার। যেখানে আওয়ামী লীগের অবস্থা সবসময়ই দুর্বল। আবার অপর পাড়ে রয়েছে বৃহত্তর যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়া। এতো কাছে এসব এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ যোগ দেবে ফরিদপুরের সমাবেশে। দেশের মধ্যবর্তী জেলায় গণসমাবেশ হওয়ায় শুধু ফরিদপুরই নয়, আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরাও ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে যোগ দেবেন। সবদিক বিবেচনায় ফরিদপুরের এই গণসমাবেশ হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বৃহৎ গণসমাবেশ।
বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, গত ১৪ বছর সারাদেশের মতো ফরিদপুরেও মামলা-হামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের একরকম পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের বাধা পেরিয়েও আন্দোলন সংগ্রামে ফরিদপুরে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন মাঠে ছিল। ফিনিক্স পাখির মতো প্রতিবারই আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে জেগে উঠেছি। এবার তার প্রমাণ হবে গণসমাবেশে। এ সমাবেশকে ঢাকার রিহার্সেল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বলেন, সমাবেশে তিন থেকে চার লাখ লোকের সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গণসমাবেশে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত বাঁধভাঙা জোয়ার আসবে। কেউ তাদের রুখতে পারবে না। ফরিদপুরে ছাত্রদল সবসময়ই শক্তিশালী। পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল ও মহিলা দলসহ সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সরব হয়ে উঠেছেন।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু বলেন, এ পর্যন্ত খুলনা, বরিশালসহ অন্যান্য পাঁচটি গণসমাবেশে সব বাধা উপেক্ষা মানুষ যেভাবে উপস্থিত হয়েছে, ফরিদপুরেও তার ব্যতিক্রম হবে না। গণসংযোগে সাধারণ মানুষ যেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তা অভূতপূর্ব। এতে স্পষ্ট যে, ১২ নভেম্বরের গণসমাবেশে যোগ দেওয়ার পথে কোনো বাধাই রুখতে পারবে না।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈসা বলেন, গণসমাবেশ ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে সবধরনের বাধা তৈরির চেষ্টা চলছে। সরকার বাধা দিতে গিয়ে কার্যত জনগণেরই ক্ষতি করছে। এর তীব্র নিন্দা জানাই।
বিএনপির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও রুকসুর সাবেক ভিপি খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক বলেন, আগে দেশের পাঁচটি বিভাগীয় শহরে বাস-লঞ্চ ও তিন চাকার গাড়ি বন্ধ করে কোনো লাভ হয়নি, ফরিদপুরেও হবে না। প্রয়োজনে নদী সাঁতরে, হেঁটে গণসমাবেশে নেতাকর্মীরা আসবেন।
বিএনপির বিভাগীয় আরেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক ছাত্রনেতা সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, শুধু ফরিদপুরেই নয়, গোপালগঞ্জেও বিএনপি এখন শক্তিশালী দল। আমরা ঐতিহাসিক গণসমাবেশের অপেক্ষায় রয়েছি।
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments