অপমান সহ্য করতে না পেরে কলেজ ছাত্রের আত্মহত্যা
গ্রাম্য শালিসের অপমান সহ্য করতে না পেরে কলেজ ছাত্র রায়হান (১৯) ফাসিতে ঝুলে আত্নহত্যা করেছে।
ঘটনা ঘটেছে সোমবার(৫ডিসেম্বর) রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিনের মূলাইদ গ্রামের রঙ্গীলা বাজার এলাকায়। ওই সময় স্বজনরা অচেতন রায়হানকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় আল হেড়া হাসপাতালে পরে শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতালে নিলে চিকিৎস তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রায়হান ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার পুরুরা গ্রামের মৃত রুহুল আমীনের ছেলে। সে রাজধাণীর মীরপুর পলিটেকনিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। পরিবারের সাথে উপজেলার মূলাইদ গ্রামের রঙ্গীলা বাজার এলাকার আমিনুলের বাড়িতে ভাড়া থাকতো।
খবর পেয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশ রাত ১১টারদিকে শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতাল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। নিতের মা বাদী হয়ে ওই গ্রামের সোহেল ,বাক্কার,রাকিব,হাসিবুল,কুহিনুর ও শিল্পির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
নিহতের বড় বোন রুমকী জানান, প্রায় বিশ বছর ধরে ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন। কলেজ বন্ধ থাকায় তিন মাসের ছুটিতে বাসায় এসেছিল রায়হান। স্থানীয় রাব্বি,হাসিবুল রায়হান ও তার বান্দবী রায়হানকে জড়িয়ে এলাকায় কুৎসা রটনা করে।রায়হান মাদক সেবন করে এমন কথা বলে বেড়াচ্ছে তারা। এর প্রতিবাদ করায় শুক্রবার (২ডিসেম্বর) বিকেলে রাব্বি,হাসিবুল রায়হানকে মারধর করে। পরে ঘটনার বিষয়ে ওই দুই যুবকের পরিবারকে জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো রায়হানকে দেখে নেয়ার হুমবী দেয়।
শনিবার(৩ডিসেম্বর)বিকেলে রায়হানের বোন রুমকী রাব্বিকে পেয়ে তার ভাইকে মারার কারণ জানতে চায়। একপর্যায়ে রুমকী ওই যুবকে চড় মারে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্তরা রবিবার (৪ডিসেম্বর) রায়হানের বাড়িতে হামলার চেষ্টা করে। এনিয়ে সোমবার (৫ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রঙ্গীলা বাজারে শালিশ বসে। শতশত পথচারী শালিশ প্রত্যক্ষ করতে জরো হয়।
রুমকী অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্তদের লোকজন রায়হান সহ তার মা-বোনকে গালিগালাজ ও চরম ভাবে অপমান করে এলাকা ছাড়ার হুমকী দেয়। শালিশের লোকজন রায়হানকে মারতে আমার মাকে হুকুম দেন। অভিযুক্তদের চাপের মুখে নিরুপায় হয়ে মা শালিশে রায়হানে দুটি চড় মারে।
আমি ভাইকে রক্ষা করতে শতশত লোকের সামনে তাদের পায়ে ধরে মাফ চাইতে বাধ্য হই। শালিশ শেষে ঘরে গিয়ে রায়হান অপমানে পাগলের মতো ছটফট করতে থাকে। আমরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করি। অপমান সহ্য করতে না পেরে রায়হান আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়।
নিহতের মা হামিদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, রাব্বি ও হাসিবুল অন্যায় ভাবে আমার ছেলেকে মেরেছিল। স্থানীয় প্রভাব শালীরা শালিশ বসিয়ে আমাদের চরম ভাবে অপমান করেছে। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে শালিশে ছেলেকে মারতে। তাতে ও তাদেও মন ভরেনি। শতশত লোকের সামনে আমার মেয়ে পা ধরে মাফ চেয়েছে। আমদের অপমান সইতে পারেনি রায়হান । অপমান ঘৃণায় সে আত্নহত্যা করেছে। রায়হানকে যারা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে আমি তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
তেলিহাটি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোবারক হোসেন বলেন,দুই পক্ষের মধ্যে ঝগড়া ছিলো। শালিশ বৈঠকে তাদেরকে মিলিয়ে দেয়া হয়। রায়হান পরে কেন আত্নহত্যা করলো তা জানা নেই।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান, বলেন শালিশের অপমান সইতে না পেরে ওই কলেজ শিক্ষার্থী আত্নহত্যা করেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা প্রকৃয়াধীন আছে।
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments