কী হবে কাল, উৎকণ্ঠা
দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি— যার যার একদফা নিয়ে এখন মাঠে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিএনপি পরস্পরের বিরুদ্ধে দিয়ে চলছে হুমকি, হুংকার। বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর ঐক্য গঠনের ঘোষণা দিয়ে মাঠের দখল নিতে তৎপর। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও দেয়া হচ্ছে পাল্টা কর্মসূচি।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুই বড় দলই পুনরায় নামছে মাঠে। উভয়পক্ষের এমন তৎপরতায় এক ধরনের ভীতির সঞ্চার হয়েছে জনমানুষের মনে। দুপক্ষের পাল্টাপাল্টিতে এরই মধ্যে ছোটখাটো কিছু সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা বা সংলাপে সমাধান না করে ফয়সালা রাজপথে হলে তার ফল হবে ভয়াবহ।
কিন্তু একটি বিষয় অনেকের কাছেই স্পষ্ট যে, আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব শান্ত থাকবে না। দুপক্ষের যখন যুদ্ধ প্রস্তুতি চলছে, তখন ছোট হোক বড় হোক যুদ্ধ একটি হবেই। কে জিতবে, কে হারবে— তা এখনই বলার সময় আসেনি।
কয়েক মাস আগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় লাঠির মাথায় পতাকা বেঁধে মিছিল সমাবেশ বা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শুরু করেছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাজধানীর হাজারীবাগে এমন একটি মিছিলে বিএনপি-আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন।
সমাবেশ থেকে ‘বিএনপি যুদ্ধে নেমেছে’ বলে সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন দলটির নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগেই রাজনীতি সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে— এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ‘বিএনপির এসব হুমকি-ধমকিসহ সব ষড়যন্ত্র’ খতিয়ে দেখে এবার আঁটঘাঁট বেঁধেই মাঠে নামছে ক্ষমতাসীনরা। গত ১২ জুলাই ঢাকায় এক সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি দেয়।
একই দিনে শাসকদল আওয়ামী লীগও সমাবেশের মধ্য দিয়ে ঘোষণা করে তাদের একদফা— শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন। এরপর ১৮ জুলাই বিএনপির পদযাত্রা আর আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার দিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
কোনো কোনো সংঘর্ষ ছিল আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি। কোনো কোনোটা ছিল ত্রিমুখী— আওয়ামী-বিএনপি-পুলিশ। এসব সংঘর্ষে লক্ষ্মীপুরে নিহত হয় বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষক দলের এক সদস্য। পরের দিনও বিএনপির পদযাত্রা এবং আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার কর্মসূচিতে সংঘর্ষ হয়।
এরপর গেল শনিবার ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশ করে বিএনপি। একই দিন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগও সারা দেশে তারুণ্যের জয়যাত্রা নামে কর্মসূচি পালন করে। যদিও উত্তেজনা থাকলেও দুই কর্মসূচিই শেষ হয় শান্তিপূর্ণভাবে।
নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি এখন টানা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠের দখল শক্ত করতে চায়। আর সেজন্য তারা শুধু বিএনপি নয়, তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে কর্মসূচিতে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছে। মাঠে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে সমমনা ৩৭টি দলকে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগও আগামী নির্বাচন পর্যন্ত টানা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। দলটির টার্গেট— টানা কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থেকে বর্তমান সরকারের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা। যদিও বিএনপির টার্গেট— এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে না দেয়া।
এমন পরিস্থিতিতে মাঠে সক্রিয় বিদেশিরা। তারা দুই দলকে সংলাপে রাজি করানোর তৎপরতা শুরু করেছে। যদিও সে তৎপরতার ফল এখনও পর্যন্তু শূন্য। দুই দলের অনড় অবস্থানের কারণে সংলাাপের প্রত্যাশা সহসা পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
রাজনীতির আগামী গতি-প্রকৃতি বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএস কামাল হোসেন বলেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ মাঠে আছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করে তারপর আমরা মাঠ ছাড়ব। তিনি বলেন, এখন বিএনপি চাইলেও ধ্বংসাত্মক কাজ করে পার পাবে না। দেশের মানুষ তাদের প্রতিহত করবে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে বিএনপি রাজপথে। অনেকবার অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছে। দলটির চেয়ারপারসন ঘরে চলে গেছেন। মির্জা ফখরুল সাহেবও ঘরে চলে যাবেন। মির্জা ফখরুল লন্ডনের নেতার নির্দেশে দেশে অনির্বাচিত সরকার আনার চেষ্টা করছেন। তারা দেশের বিরুদ্ধে, দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। জনগণই এ সবের জবাব দেবে।
জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপি ধ্বংসাত্মক কাজ করে না। তারপরও আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, মামলা দেয়া হচ্ছে। আমাদের কর্মীরা কেউ বাড়িতে থাকতে পারছে না। আমরা এই দমন-পীড়ন উপেক্ষা করেই আন্দোলনের মাঠে থাকব। এবার জয় আমাদের হবেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, রাজপথে সমাধান অনেক ক্ষতি ডেকে আনে। অতীতে এটা দেখা গেছে। তাই প্রকাশ্যে না হলেও পর্দার আড়লে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধানে পৌঁছানো প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে নানা ধরনের পরিণতি হতে পারে। ২০০৬ সালের মতো একটা ভিন্ন ধরনের সরকারও চলে আসতে পারে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখেও একটি পরিস্থিতি আমরা দেখেছি। এ রকম হলে সংঘাত বাড়বে, নয়তো অন্য কোনো শক্তি সুযোগ নেবে।
সূত্র: নয়া শতাব্দি।
Advertisement (sandha)
Advertisement (pabna sweet)
Advertisement (school)
No comments