নৌকার পক্ষে কাজ না করলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি ওসির
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেনত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ বি এম আনিছুজ্জামান ২০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আজ শনিবার ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ বি এম আনিছুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ নির্বাচন কমিশনার বরাবর দেওয়া অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) সংসদ সদস্য প্রার্থী এ বি এম আনিছুজ্জামান উল্লেখ্য করেন, সম্প্রতি উপজেলার ২ নম্বর বৈলর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শাহানশাহ ও ১ নম্বর ধানীখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ সোহেল আহাম্মদকে থানায় ডেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাফেজ রুহুল আমিন মাদানীর পক্ষে নির্বাচন করার নির্দেশ প্রদান করেন ওসি কামাল হোসেন। তা না হলে তাঁদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাঁর নির্দেশে ধানীখোলা ইউনিয়নের বিট অফিসার এসআই আমিনুল ইসলাম ধানীখোলা ইউনিয়নের ভোটারদের নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিলে গ্রেপ্তার করে জেলে ঢুকানোর হুমকি দিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে ধানীখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ সোহেল বলেন, ‘১৯ ডিসেম্বর আমার এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একজন লোক মারা যায়। বিষয়টি খোঁজ নিতে থানায় গেলে ওসি কামাল হোসেন আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে আপনি কার নির্বাচন করছেন। চেয়ারম্যান জানান, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তখন ওসি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। আপনাকে দুই দিনের সময় দিলাম, ভেবে আমাকে জানাবেন।’
বৈলর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শাহানশাহ বলেন, ‘১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর একটি মামলার বিষয়ে জানতে ওসি সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে যাই। সেখানে গেলে ওসি বলেন, আপনি তো স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষের কাজ করছেন। তা করা যাবে না, আপনাকে বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী রুহুল আমিন মাদানীর পক্ষে কাজ করতে হবে। যদি তা না করেন, তাহলে সমস্যায় পড়বেন। এই কথা শুনে আমি থানা থেকে বের হয়ে চলে আসি।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী এ বি এম আনিছুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও আমার সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। তবে, এ বিষয়ে আপডেট কোনো খবর নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়নি।’
ত্রিশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি অফিশিয়াল কেউ আমাকে জানায়নি। তবে, অন্য মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা। কারণ, গত ১৫ দিনে আমি তিন দিন ওই ইউনিয়নে গিয়েছি। আমার কারোর সঙ্গে নৌকায় ভোট দেওয়া বা নির্বাচনের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। প্রয়োজনে আপনি (প্রতিবেদক) ঘটনাস্থলে গিয়ে যাচাই করে দেখতে পারেন। যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে এমন কথা বলে, তাহলে আমি যেকোনো শাস্তি মেনে নেব।’
ত্রিশাল থানার ভার প্রারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি কাউকে কোনো প্রকার হুমকি বা মামলার ভয়ভীতি দেখাইনি।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। যেহেতু, অভিযোগ নির্বাচন কমিশনার বরাবর দেওয়া হয়েছে। সেহেতু, নির্বাচন কমিশনার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু, নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়। সেখান থেকে বিষয়টি দেখবে।’
এ বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ-৭ ত্রিশাল আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী রুহুল আমিন মাদানীর নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
No comments