সংসদে বিরোধী দল হচ্ছে কারা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২২টি আসন জিতে এককভাবে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে টানা তিনবারের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
তবে সংসদে বিরোধী দল কারা হবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
দেশের সংবিধান বা কোনো আইন-বিধিতে বিরোধী দল ইস্যুতে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই, কেবল সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে 'বিরোধী দলীয় নেতা' কথাটি উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, 'বিরোধী দলের নেতা অর্থ স্পিকারের বিবেচনা মতে যে সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিসংঘের নেতা।'
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২২২টিতে জিতেছে আওয়ামী লীগ এবং একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের নেতা, ৬২টি আসন পেয়েছে।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে এই পরিস্থিতির মিল পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগ সেসময় ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে জিতেছিল এবং বিরোধী দল ও স্বতন্ত্ররা সাতটি আসন পায়।
সেসময় সাতজন সংসদ সদস্য বিরোধী দল গঠনের দাবি করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা প্রত্যাখ্যান করেন। প্রথম সংসদে কোনো বিরোধী দল না থাকলেও সাতজনের জন্য সংসদে একটি কক্ষ বরাদ্দ ছিল।
১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে প্রায় ছয় ডজন দলের সমন্বয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল গঠিত হয়। জোটটি তৎকালীন ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৯টি আসন পেয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং অন্যান্য কয়েকটি দল ওই নির্বাচন বয়কট করেছিল।
১৯৯৬ সালের বিতর্কিত ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, যা আওয়ামী লীগসহ বেশিরভাগ দল বর্জন করেছিল, সেবারও সংসদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। সেই সংসদ মাত্র ১১ দিন স্থায়ী হয়েছিল।
ওই নির্বাচনে তিনটি দল অংশ নেয় এবং বিএনপি ২৭৮টি আসনে জয়লাভ করে। ফ্রিডম পার্টি পেয়েছিল একটি আসন এবং স্বতন্ত্ররা পেয়েছিল ১০টি আসন। এছাড়া ১০টি আসনে ফলাফল স্থগিত করা হয় এবং একটিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০টি আসন পাওয়া বিএনপি সংসদে বিরোধী দল হিসেবে ছিল।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ৩৪টি আসন পেয়ে বিরোধী দল গঠন করে জাতীয় পার্টি। এ সময় স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিম স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নিয়ে ১৬ সদস্যের জোট গঠন করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বতন্ত্ররা সংসদে বিরোধী দল গঠন করতে চাইলে এবারও এ ধরনের জোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'যেহেতু তারা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হননি, তাই তাদের বিরোধী দল হতে কোনো বাধা নেই। কারণ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।'
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আইনপ্রণেতারা সংসদে তাদের আসন হারাবেন যদি তারা তাদের মনোনীত দলের বিরুদ্ধে সংসদে ভোট দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, 'কিছু প্রার্থী যারা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র নন, কিন্তু জয়ী হয়েছেন তারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিরোধী দলের অংশ হতে পারেন। সব স্বতন্ত্র এমপি-নির্বাচিত একটি জোট গঠন করতে পারেন এবং বিরোধী দল হতে পারেন।'
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের অবশ্য বলেছেন, যত আসনই জিতুক না কেন, তার দলই সংসদে বিরোধী দল হবে।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিরোধী দল গঠন করতে হলে একটি দল থাকতে হয়। কিন্তু স্বতন্ত্ররা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়।'
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও স্পষ্টভাবে কিছু জানাননি।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'পরিস্থিতি ও বাস্তবতা বিবেচনা করে নতুন প্রধানমন্ত্রী ও নতুন নেতারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।'
অন্যদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, জোট গঠনের বিষয়ে স্বতন্ত্ররা তাদের অবস্থান পরিষ্কার না করা পর্যন্ত কে বিরোধী দল হবে তা বলা সম্ভব নয়।
তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।'
সরকার গঠন ও মন্ত্রিসভার আকার কেমন হবে তা এ মাসের মধ্যেই জানা যাবে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৯ জানুয়ারি।
আওয়ামী লীগের দলীয় অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, ১০ জানুয়ারির পর যেকোনো দিন মন্ত্রিসভা গঠন হতে পারে। আগামী ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে আওয়ামী লীগ।
No comments