× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



শর্ত না মানায় অর্থায়ন বন্ধ, বেকায়দায় পৌরবাসী

লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় প্রতিদিন প্রায় ৩০ টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তিন বছর আগে স্যানেটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু তা কাজে আসছে না, অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এতে বর্জ্যের স্তূপ দিন দিন বড় হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে পৌর এলাকার লক্ষ্মীপুর-মজুচৌধুরীর হাট সড়কের পাশে বাঞ্চানগর এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দেশি-বিদেশি অর্থায়নে প্রায় ৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল স্থাপন করা হয়। প্রকল্পটির মাধ্যমে পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য পৃথক করে কাজে লাগানের কথা ছিল। পচনশীল বর্জ্য দিয়ে জৈব সার এবং অপচনশীল (পলিথিন, প্লাস্টিক) দিয়ে তেল উৎপাদন করা বা উৎপাদনকৃত কারখানায় সরবরাহ করার কথা। এ ছাড়া পয়োবর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে সার উৎপাদনের জন্য ল্যান্ডফিলে পাম্প হাউসও তৈরি করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দেয় দাতা সংস্থা। সরকার ও দাতা সংস্থার দেওয়া নির্দেশিত শর্তানুযায়ী ‘কারিগরি ও আর্থিকভাবে সহায়তা পেতে ল্যান্ডফিল স্টেশন নির্মাণের আগে ওই এলাকায় যেসব বর্জ্য ফেলা হয়েছিল, পৌর কর্তৃপক্ষ তা স্বল্প সময়ের মধ্যে অপসারণ করবে’। কিন্তু সে শর্ত পূরণ করতে পারেনি পৌরসভা। সংগ্রহকৃত বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা এবং আগুনে পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণের কারণে প্রকল্পে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় দাতা সংস্থাগুলো। এতে গত তিন বছর ধরে অলস পড়ে আছে ল্যান্ডফিলটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন পাঁচটি ট্রাক, ৩৫টি ভ্যানগাড়ির মাধ্যমে ৮২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাজারসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে। এসব বর্জ্য লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে উত্তর তেমুহনী এলাকায় ফেলা হয়। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ওই বর্জ্য সেখান থেকে ল্যান্ডফিল এলাকায় নেওয়া হয়। এর মধ্যে উত্তর তেমুহনী এলাকায় বর্জ্যের দুর্গন্ধে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্জ্য ফেলে রাখা জমির মালিক ইমতিয়াজ ইমু বলেন, ল্যান্ডফিল এলাকায় আমাদের ৭৭ শতাংশ জমি রয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক তাতে বর্জ্য ফেলা শুরু করে। বাধা দেওয়ায় হুমকির শিকার হতে হয়েছে। পরে আদালতে ১৪৪ ধারায় মামলা করি। এরপরও গত দুই বছর ধরে বর্জ্য ফেলে বড় বড় স্তূপ করে রেখেছে। একই এলাকার কৃষক মো. আলম বলেন, ল্যান্ডফিলের কাছেই আমাদের বসতি। বর্জ্যের দুর্গন্ধে টেকা দায়। আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট সাইফুল ইসলাম শরীফ বলেন, দুর্গন্ধে শ্বাসনালিতে ইনফেকশন হয়ে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পৌরসভার কনজারভেশন ইন্সপেক্টর ফয়েজ আহম্মদ জানান, পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৩০ টনেরও বেশি বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এর ৪০ ভাগই অপচনশীল। ল্যান্ডফিলে মানব বর্জ্য ও গৃহস্থলির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পৃথক ইউনিট রয়েছে। তবে অপচনশীল বর্জ্য রিসাইকেল ইউনিট নেই। এ অপচনশীল বর্জ্য বাছাইয়ের জন্য দৈনিক হাজিরায় ১৬ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। নানা কারণে আর্থিক সুবিধা বন্ধ হওয়ায় তারা এখন আর কাজ করছে না। জানতে চাইলে মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, ‘জনবল সংকট ও অর্থ সংকটের কারণে ল্যান্ডফিলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বন্ধ রয়েছে। এতে বাধ্য হয়ে ল্যান্ডফিলের আশপাশে বর্জ্য স্তূপ করতে হচ্ছে। নতুন আরেকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে বর্জ্য থেকে জৈব সার ও জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হবে। চলতি বছরেই প্রকল্পটির মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু হবে।’

No comments