× প্রচ্ছদ ঈশ্বরদী পাবনা জাতীয় রাজনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষাজ্ঞন বিনোদন খেলাধূলা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্বাচন কলাম
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঈশ্বরদী খেলা প্রযুক্তি বিনোদন শিক্ষা



এক নজরে জামায়াতে ইসলামীর ৮৩ বছর

১৯৪১ সালের ২৬ অগাস্ট উপমহাদেশের বিতর্কিত ধর্মীয় রাজনীতিক আবুল আলা মওদুদীর হাত ধরে জামায়াতে ইসলামীর সূচনা হয়। তখন এর নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরোধিতা করায় ১৯৬৪ সালে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন ১১ দফাসহ বিভিন্ন দাবির বিরোধিতা করে জামায়াত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত ও এর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ। দেশজুড়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটায় তারা। আদালতে ঘোষিত যুদ্ধাপরাধ মামলার বিভিন্ন রায়ে সেসব অপরাধের বিষয়গুলো উঠে আসে। মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি, হত্যাকাণ্ডে সায় ও সহযোগিতার দায়ে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার আমির গোলাম আযমকে টানা ৯০ বছর অথবা আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটির আরো পাঁচ শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন’ বা সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, দেশের কোনো সংস্থার শীর্ষ পদে স্বাধীনতাবিরোধীদের থাকা উচিত নয়। ১৯৭১ সালের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় জামায়াতও এর আওতায় পড়ে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে জামায়াতকে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করে দেয় এবং গোলাম আযমকে পাকিস্তানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন। তিনি দলের আমিরের দায়িত্ব নেন। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসন পেয়ে সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দেয়। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আসন কমে তিনটি হলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত পায় ১৭ আসন। চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভাতেও জায়গা পান জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতা। একাত্তরে ন্যক্কারজনক ভূমিকার পরও খালেদা জিয়ার চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়াকে লাখো শহীদের প্রতি ‘চপেটাঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয় যুদ্ধাপরাধের এক মামলার রায়ে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দুটি আসন পেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। এরপর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক তরীকত ফেডারেশনের নেতা রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজনের রিট আবেদনে হাই কোর্ট ২০১৩ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে। সর্বোচ্চ আদালতেও হাই কোর্টের ওই রায় বহাল থাকে। নিবন্ধন বাতিলের পর জামায়াত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়নি। তবে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের কয়েকজন জোটসঙ্গী বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র হলেও জামায়াত এখন আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির সঙ্গে জোটে নেই। তবে চলতি বছর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির হরতাল-অবরোধের সঙ্গে মিল রেখে একই কর্মসূচি দিয়েছিল জামায়াত। তরীকত ফেডারেশনের নেতা রেজাউল হক চাঁদপুরী জামায়াতে ইসলামীর মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়েও গত বছর আপিল বিভাগে একটি আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে গত নভেম্বরে আপিল বিভাগ জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে চূড়ান্ত রায় দিয়ে দিলে ওই রিট মামলা আর এগোয়নি। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের দাবিও দীর্ঘদিনে। তবে আইনি জটিলতার কারণে সে বিষয়টি আটকে আছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধের বিচারে ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইনের অধীনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০১৩ সালে আইনে সংশোধনী এনে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামির পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষেরও আপিলের সমান সুযোগ তৈরি করা হয়। ট্রাইব্যুনালে বিচারে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা। তার মধ্যে রয়েছে দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ, নায়েবে আমির আব্দুস সোবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মো. কামরুজ্জামান, শূরা সদস্য মীর কাসেম আলী। একাত্তরে জামায়াতের আমিরের দায়িত্বে থাকা গোলাম আযম, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। গোলাম আযম কারাগারেই মারা গেছেন। আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত সাঈদীও কারাগারে মারা গেছেন। ব্যক্তির অপরাধের বিচার হলেও দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের দাবি ২০১৩ সালেই গণজাগরণ মঞ্চ থেকে তোলা হয়েছিল। গোলাম আযমের মামলার রায়ে আদালত জামায়াতকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করার পর দাবিটি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভিন্ন সময়ে এর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে আইনে গঠিত, সেখানে দলের বিচারের সুযোগ না থাকায় বিষয়টি আটকে যায়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ২০২২ সালের অগাস্টে বলেছিলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারে আইন সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদের পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পরে সে বিষয়টি আর সংসদ পর্যন্ত যায়নি।

No comments